কোরবানির পশুর চামড়া

বালিকান্দি বাজারে এবার চামড়ার ব্যবসা জমেছে

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মনু নদের পাড়ে অবস্থিত বালিকান্দি বাজারের ব্যবসায়ীরা এবার প্রায় ১২ হাজার চামড়া লবণজাত করে সংরক্ষণ করেছেন। এখন সেই চামড়া বিক্রি করে তাঁরা লাভের মুখ দেখার আশায় আছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে নানা কারণে প্রাচীন এই বাজারে চামড়ার ব্যবসা তেমন জমেনি। এবার পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। ফলে এই বাজারকেন্দ্রিক চামড়ার ব্যবসায়ে নতুন করে প্রাণ ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বালিকান্দি বাজারের পাশাপাশি পৌর বাস টার্মিনালেও ঈদের দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চামড়ার বাজার বসে। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে আসেন।

ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, বালিকান্দি বাজারটি দেড় শতাধিক বছরের পুরোনো। এখানে সারা বছরই চামড়া বেচাকেনা হয়। তবে কোরবানির ঈদেই জমে বেশি।

২০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে তিনি এবার আড়াই হাজার গরুর চামড়া কিনেছেন। কিন্তু লবণ–সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাঁর প্রায় ৫০০ চামড়া নষ্ট হয়েছে।
মো. শওকত, বালিকান্দি চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০১৪ সাল থেকে এই বাজার জৌলুশ হারাতে শুরু করে। কারণ, ঢাকার অনেক আড়তদার এবং ট্যানারি মালিক নানা অজুহাতে এখানকার ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা আটকে রেখেছেন। এতে অনেকেরই লাখ লাখ টাকা আটকা পড়েছে। সে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। মো. সুলেমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে পারিবারিকভাবে চামড়ার ব্যবসা করছি। বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছি, আগে ব্যবসায় ঝামেলা ছিল না। এখন কিন্তু আড়তদারেরা টাকা দিতে চান না। আড়তদারের কাছে আমার ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বকেয়া আছে।’

মো. সুলেমান জানান, তিনি দুই হাজার গরুর চামড়া কিনেছেন। আকার অনুযায়ী একেকটি চামড়ার দাম পড়েছে ২০০ থেকে ৭০০ টাকা। এই চামড়া সংরক্ষণে ২০০ বস্তা লবণ কিনেছেন। প্রতি বস্তার (৫০ কেজি) দাম ৮০০ টাকা।

বালিকান্দি গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী আবদুল করিম বলেন, গত কয়েক বছরে লস দিতে দিতে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ধারকর্জ করে চামড়া কেনেন। এরপরে লস দিয়ে বেচতে বাধ্য হন। এর ওপর ঢাকার আড়তদারেরা বকেয়া টাকা দেননি।

বালিকান্দি চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শওকত গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানান, ২০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে তিনি এবার আড়াই হাজার গরুর চামড়া কিনেছেন। কিন্তু লবণ–সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাঁর প্রায় ৫০০ চামড়া নষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, বালিকান্দি বাজারের ব্যবসায়ীরা গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১২ হাজার চামড়া সংরক্ষণ করেছেন।

এই সংখ্যা ১৫–১৬ হাজারে গিয়ে ঠেকবে। পাঁচ-সাত দিন পর থেকে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে এসব চামড়া বিক্রি শুরু হবে। ঢাকা ও নাটোরের আড়তদারের কাছে তাঁর ৬০ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে বলে জানান তিনি।