বাজেট
বাজেট

নতুন ধনীদেরও করের আওতায় আনার তাগিদ

  • শিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেন।

  • প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আফতাব উদ্দিন আহমেদ স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু রাখার পক্ষে মত দেন।

দেশের বড় বড় শহরের বাইরেও নতুন ধনিক শ্রেণি গড়ে উঠেছে, যাদের অনেকেই বর্তমানে করের আওতার বাইরে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ ধনিক শ্রেণি থেকে কর আদায়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতিরা।

সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় তাঁরা এ পরামর্শ দেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার,অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

বৈঠকে ব্যাংক একীভূত হওয়ার পদক্ষেপের যৌক্তিকতা, মূল্যস্ফীতি, বাজেট বাস্তবায়নে দুর্বলতা, রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী বা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর—কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বৈঠক অনুসরণ করার জন্য গণমাধ্যমকে জানানোর রেওয়াজ ছিল। এবার তা–ও হয়নি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অধিকতর কার্যকর করার পরামর্শ দেন। তিনি সভায় বলেছেন, ‘এনবিআরের করজাল সম্প্রসারণ করতে হবে। দেশের বড় বড় শহরের বাইরেও অনেক ধনিক শ্রেণি রয়েছে। তাদের অনেকেই করের আওতার বাইরে।’ আ স ম ফিরোজের কথার সঙ্গে অনেকেই একমত পোষণ করেন।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আফতাব উদ্দিন আহমেদ স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু রাখার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, অন্তত দরিদ্রপ্রবণ এলাকার বিদ্যালয়গুলোতেও যেন এ সুবিধা বজায় থাকে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ কারিগরি শিক্ষার প্রতি বেশি নজর এবং এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাজেটের বিষয়বস্তুর বাইরেও বৈঠকে দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে ভালো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার পদক্ষেপের যৌক্তিকতা, মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল কাজে না লাগা, বাজেট বাস্তবায়নে দুর্বলতা, রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়নসহ অর্থনীতির আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন স্থায়ী কমিটির সভাপতিরা।

অর্থমন্ত্রী সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সব বক্তব্য শুনলেও নিজে খুব বেশি মন্তব্য করেননি। তিনি বাজেট বাস্তবায়ন বিষয়ে শুধু বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় একা বাজেট বাস্তবায়ন করে না, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলেই বাজেট বাস্তবায়ন করে। অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা নিয়েও তাই কথা বলা দরকার। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের জাতীয় সংসদেও কথা বলার সুযোগ রয়েছে।

ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনেই ব্যাংক একীভূত হওয়ার কথা বলা আছে। তবে বিষয়টি আগে ছিল ঐচ্ছিক। একভাবে বলতে গেলে এখনো তা ঐচ্ছিক। তবে আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর সেটি হচ্ছে, একীভূত হওয়ার পর্যায়ে থাকার পরও কোনো ব্যাংক যদি স্বেচ্ছায় একীভূত না হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তখন তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। তবে কাজটি এখনই করা হবে না। এটি করা হবে ভবিষ্যতে।

প্রাক্‌–বাজেট এ আলোচনায় আরও অংশ নেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি; পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান; সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ; সরকারি হিসাব–সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ; সরকারি প্রতিশ্রুতিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির মুহিবুর রহমান; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির দীপংকর তালুকদার; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির শরীফ আহমেদ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্; পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির বীর বাহাদুর উশৈসিং; বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির সাজ্জাদুল হাসান; ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ প্রমুখ।