এখন থেকে সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেন পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের সব উপযুক্ত নাগরিক ও প্রবাসীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাসিক কিস্তি জমা দিতে পারবেন। দেশের প্রথম কোনো বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে এ ধরনের সেবা চালু করল সিটি ব্যাংক। এর আগে সরকারি সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক এ সেবা চালু করেছে।
এ লক্ষ্যে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ও সিটি ব্যাংক পিএলসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সমঝোতা সই হয়। সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান ও সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
সিটি ব্যাংক জানিয়েছে, এই সমঝোতা স্মারকের ফলে সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের সব উপযুক্ত নাগরিক ও প্রবাসী নাগরিকেরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী বিভিন্ন স্কিমের মাসিক কিস্তি ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমা দিতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সামাজিক সুরক্ষা খাতের সুবিধাভোগী ও সুবিধার পরিমাণ বাড়াতে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশনের সমতা, সুরক্ষা ও প্রগতি স্কিমে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও প্রবাসী স্কিম পিছিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় আসছে, তাদের বড় ভূমিকা পালন করার অবকাশ আছে।
অর্থসচিব জানান, প্রবাসীদের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তির হার বাড়াতে চারটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে প্রথম কোনো বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সিটি ব্যাংক সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমে যুক্ত হলো।
পেনশন স্কিমের সুরক্ষা বিষয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই জানিয়ে খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পেনশন স্কিমের অর্থ সরকারের ট্রেজারি বন্ডের মতো সুরক্ষিত জায়গায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকার ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়েছে। শিগগিরই আরও ১০ কোটি টাকার বন্ড কেনা হবে।
সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন বলেন, দেশের আনুষ্ঠানিক আর্থিক খাতের সম্প্রসারণ ও মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেনশন স্কিম বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি এটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকের জন্যও সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে।
তবে এ ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রমোটার’ হিসেবে থাকতে চান না জানিয়ে মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আমরা পেনশন স্কিম বিক্রি করতে চাই। পেনশন স্কিমে গ্রাহকদের অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়াতে চাই।’ এ সময় সিটি ব্যাংকের বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে পেনশন স্কিম যুক্ত করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেনশন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। তারা এর সুফলও ভোগ করছে। বাংলাদেশে এর সুফল পেতে আরও অন্তত ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তখন এই ব্যবস্থা সবার কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হবে, প্রক্রিয়াও অনেক সহজ হবে বলে জানান তিনি।
সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, প্রবাসীদের মধ্যে পেনশন স্কিম নিয়ে আগ্রহ ও সচেতনতা বাড়াতে সিটি ব্যাংক কাজ করবে। এ জন্য সিটি ব্যাংক তার যাবতীয় ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবহার করে এ কাজে সহযোগিতা করবে।
অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের মালয়েশিয়া মানি ট্রান্সফারের (সিবিএল) প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান ফারাজী বলেন, মালয়েশিয়া থেকে ৫০ হাজারের বেশি প্রবাসী সিটি ব্যাংকের পরিষেবা ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু দেশটিতে প্রায় ১০ লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। ফলে আরও বেশি প্রবাসীর কাছে পৌঁছানোর সুযোগ আছে। একই সঙ্গে, তাদের পেনশন স্কিমের বিষয়েও আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মুর্শীদুল হক খান, মো. গোলাম মোস্তফা ও সিটি ব্যাংকের হেড অব করপোরেট ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট তাহসিন হক প্রমুখ।