বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)

বিবিএসের তথ্য

দেশে বাড়ছে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা

দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের জনগোষ্ঠী ছিল মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। সেই হিসাবে কয়েক বছরের ব্যবধানে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা প্রায় এক শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে ৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষ অর্থাৎ শিশু, কিশোর তরুণ ও মধ্যবয়সী মানুষের সংখ্যা কমেছে। বিবিএস গতকাল রোববার গত বছরের তথ্যের ভিত্তিতে যে ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকাশ করেছে, সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বিবিএসের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে শুধু ২০২২ সাল ছাড়া প্রতিবছরই ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী ছিল ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ; ২০২২ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সর্বশেষ গত বছর এক ধাক্কায় তা অনেকটা বেড়ে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশে উঠেছে।

দেশে বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষই বেশি। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ছিল মোট পুরুষ জনগোষ্ঠীর ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ছিল মোট পুরুষ জনগোষ্ঠীর ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। নারীদের ক্ষেত্রে এ হার পুরুষের তুলনায় কম। ২০২৩ সালে দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারী ছিল মোট নারী জনগোষ্ঠীর ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ; ২০১৯ সালে যা ছিল ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শুধু যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে, তা নয়। ৫০ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বেড়েছে। সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে, কর্মক্ষমতা তত কমতে থাকে। সেই হিসাবে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি মানে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়া।

বিবিএস বলছে, ২০১৯ সালে দেশে ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা বেড়ে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশে উঠেছে। এ কারণে দেশে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালে নির্ভরশীল প্রবীণ ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ৮ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

জনমিতির সুবিধা

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী) যদি বেড়ে যায় এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যা (শূন্য থেকে ১৪ ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী) কমে যায়, তাহলে জনমিতির নির্ভরশীলতার হার দেশটির অনুকূলে থাকে।

গত পাঁচ বছরে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়লেও দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনো কর্মক্ষম। ফলে জনমিতির সুবিধা কাজে লাগানোর এটাই সবচেয়ে অনুকূল সময়। কেননা, জনমিতির এ সুবিধা বেশি দিন থাকবে না। গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, জনসংখ্যার বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষম হলেই যে একটি দেশ জনমিতির লভ্যাংশ নিতে পারবে, তা নয়। এ সুবিধা নিতে হলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।

গত শতকের ষাট ও নব্বইয়ের দশকে হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতির সুবিধা নিয়ে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পেরেছে।

এদিকে দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে দেশের মানুষের গড় বয়সও বেড়েছে।

২০১৯ সালে দেশের মানুষের গড় বয়স ছিল ২৮ দশমিক ৯৬ বছর; ২০২৩ সালে তা ২৯ দশমিক ২৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীর গড় বয়স বেশি। ২০২৩ সালে দেশের নারীদের গড় বয়স ছিল ২৯ দশমিক ৪২ বছর আর পুরুষের ২৯ দশমিক শূন্য ৯ বছর।