বাজেটে শর্ষের বীজ আমদানিতে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ। তা প্রত্যাহার চেয়ে চিঠি দিয়েছে অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশন।
দেশে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পরও এই ভোজ্যতেলে কোনো কর ছাড় দেয়নি সরকার। এর ওপর শর্ষের বীজ আমদানিতে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এত দিন বীজ থেকে তেল উৎপাদনে উৎসাহ দিতে শর্ষের বীজ, সূর্যমুখীর বীজ ও তুলার বীজ আমদানিতে কোনো কর ছিল না।
স্থানীয় উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো বলছে, শুল্ক আরোপের কারণে সয়াবিনের পর এখন শর্ষের তেলের দামও বাড়তে পারে। সে জন্য শর্ষের বীজ আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর আবেদন জানিয়ে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশন।
তেলকল সমিতির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশীয় কোম্পানিগুলো শর্ষের বীজ আমদানি করে তেল উৎপাদন করে। তাই শুল্ক আরোপের ফলে বাজারে শর্ষের তেলের দাম বেড়ে যাবে। আবার বাজেটে শর্ষের বীজের শুল্ক বসিয়ে খৈল আমদানিতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে দেশীয় শিল্প বিপদের মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী দেশে বছরে ১৪ লাখ টনের মতো পরিশোধিত ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর ৯০ শতাংশই আমদানি হয়। মোট ভোজ্যতেল আমদানির ৪০ শতাংশ হচ্ছে সয়াবিন তেল। এর বাইরে বিপুল পরিমাণে পাম তেল আমদানি হয়। শর্ষে দেশে উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানিও হয়। স্থানীয় ও আমদানি করা বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে স্থানীয় কোম্পানিগুলো।
ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বোতলজাত শর্ষের তেল প্রতি লিটার ব্র্যান্ডভেদে ২২০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী বাজারে এখন এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১২৪ থেকে ১৩০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৩ শতাংশ বেশি। গত ২৭ মে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য এক বিজ্ঞপ্তিতে সয়াবিনের এক লিটারের বোতলের খুচরা মূল্য ১৫৩ টাকায় নির্ধারণের কথা বলেছিল। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানায় তারা।
বিশ্বব্যাংকের বাজারদরের তালিকা বলছে, গত বছর এপ্রিল-জুন সময়ে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের প্রতি টনের গড় দাম ছিল ৭০৭ ডলার, যা বেড়ে গত মে মাসের শেষে ১ হাজার ৪৯৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির হার ১১২ শতাংশ। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান কর কাঠামো অনুযায়ী সরকারের রাজস্বও অবশ্য বাড়ছে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বসানো হয়। পাশাপাশি আরোপ করা ৪ শতাংশ হারে অগ্রিম কর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত এক বছরে ভোজ্যতেলের ওপর করহার কমাতে একাধিকবার এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু কর কমেনি। তবে এনবিআর অগ্রিম ভ্যাট আদায়ে ছাড় দিয়েছে। এবারও ভ্যাট আদায় হবে, তবে অগ্রিম নয়।
ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের ওপর তিন স্তরের ভ্যাটের বদলে এক স্তরে আরোপের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁরা আশা করেছিলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের নতুন বাজেটে এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ থাকবে। তবে তা হয়নি। উল্টো শর্ষের বীজ আমদানিতে কর বসানো হলো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ লাখ ৫৮ হাজার টন শর্ষের বীজ উৎপাদিত হয়, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৭ হাজার টন বেশি। অন্যদিকে দেশে বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ টন শর্ষের বীজ আমদানি হয় বলে জানান আমদানিকারকেরা।
অবশ্য মানুষের দুশ্চিন্তা তেলের দাম নিয়ে। গতকাল কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে কেনাকাটা করতে যাওয়া মাসুদুর রহমান নামের এক ভোক্তা প্রথম আলোকে বলেন, শর্ষের তেলের দাম এমনিতেই চড়া। গত এপ্রিলে এক দফা দাম বেড়েছে। সয়াবিনের দামও অনেক বেড়েছে। এখন কর ছাড় দেওয়া দরকার। তবে শুল্ক ছাড় দিলে দামও যাতে কমে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।