২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বাজেটের নাম দিয়েছেন ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’।
জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বাজেটের নাম দিয়েছেন ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। আজ বুধবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে এই বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৩ জুন সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর অধিবেশনজুড়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করেন সাংসদেরা। কোভিড মহামারির কারণে এবারও আলোচনা হয় সীমিত আকারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) ওপর বাড়তি কর আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, গতকাল তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
বাজেট উপস্থাপনের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয় ৭ জুন। এরপর চার দিন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা হয়। এরও পর টানা ১০ দিন বিরতি দিয়ে বাজেটের ওপর আলোচনা হয় ২ দিন। সব মিলিয়ে শতাধিক সাংসদ বাজেটের ওপর আলোচনা করেন।
করোনার সংক্রমণ এড়াতে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন সাংসদকে নিয়ে বসে সংসদ অধিবেশন। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সংসদে অর্থবিল পাস হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) ওপর বাড়তি কর আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, গতকাল তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিনা প্রশ্নে নগদ টাকা, শিল্পে বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, ফ্ল্যাট, ব্যাংক আমানতসহ কয়েকটি খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
শিল্পের কাঁচামাল কেনায় ক্রসচেকে লেনদেনের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি টাকার কাঁচামাল কিনলে চেকে লেনদেনের বিধান চালু রয়েছে বর্তমানে। এই সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
কর্মীদের বেতন পরিশোধের ক্ষেত্রেও নতুন নিয়ম আনা হয়েছে অর্থ বিলে। কর্মীদের বেতন-ভাতা ও সম্মানীর পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার বেশি হলেই তা ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, সংশোধন করে এই সীমা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিনা প্রশ্নে নগদ টাকা, শিল্পে বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, ফ্ল্যাট, ব্যাংক আমানতসহ কয়েকটি খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৫ শতাংশের সমান।
এবারের বাজেটের মোট আকারের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা।
এবারের বাজেটের মোট আকারের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হবে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। সুদ বাবদ ব্যয় রয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বাজেটে রাজস্ব খাত থেকে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা আদায় করার চিন্তা সরকারের। সংস্থাটিকে আয়কর ও ভ্যাট মিলিয়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৪ হাজার ৪৬৫ কোটি, আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৯০৭ কোটি, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৬ কোটি, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। আগামী বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আজ অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার আহ্বান জানান। বিরোধী দলের সাংসদেরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাংসদেরা ৬২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।
মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব
আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাংসদেরা ৬২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হয় সংসদে। সব প্রস্তাবই কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।
ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক, রুস্তম আলী ফরাজী, ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লিয়াকত হোসেন খোকা, রওশন আরা মান্নান এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, মোশাররফ হোসেন ও গণফোরামের মোকাব্বির খান।
নির্দিষ্টকরণ বিল পাস
বাজেটের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় রয়েছে। সেগুলো মিলিয়ে মোট ৭ লাখ ৯২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে আজ। রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজই বাজেটসংক্রান্ত নির্দিষ্টকরণ বিলে অনুমোদন দেওয়ার কথা।
এর মধ্যে সাংসদদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩ কোটি টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় ২ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাই কোর্টের বিচারপতি ও মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতন অন্তর্ভুক্ত।
নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের সময় সংসদে উপস্থিত সাংসদেরা টেবিল চাপড়িয়ে অভিনন্দন জানান অর্থমন্ত্রীকে। সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধীদলীয় সাংসদেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।