মুহিতের হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীলের কাতারে

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখন অর্থনীতিতে। ৫০ বছরে বাংলাদেশ নামের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হয়ে উঠেছে চমকে ভরা জাদুর বাক্স। সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর দেশে পরিণত। তবে যাত্রাপথটা সহজ ছিল না। বড় ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পথে এগিয়ে গেছেন আমাদের সাহসী উদ্যোক্তারা। এ সাফল্যের পেছনে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ যেমন ছিলেন, আছেন নীতিনির্ধারকেরাও। মূলত অর্থনীতির এসব অগ্রনায়ক, পথ রচয়িতা ও স্বপ্নদ্রষ্টারাই ৫০ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশকে বসিয়েছেন মর্যাদার আসনে।
আমরা বেছে নিয়েছি সেই নায়কদের মধ্যে ৫০ জনকে। আমাদের কাছে তারাই অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’।

বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক ও উচ্চতর জায়গায় দেখতে আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন একজন সত্যিকারের স্বপ্নদ্রষ্টা। প্রতিবছরই তিনি বাজেট করতেন একটু বেশি বড় করে। এই বড় করাটা যে বুঝেশুনেই করতেন, তার ব্যাখ্যাও দিতেন। তাঁর বাজেট ও তাঁর সরকার যে উচ্চাভিলাষী, তা গর্বভরে বলতেনও।

টানা ১০ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি তাঁর উত্তরসূরি আ হ ম মুস্তফা কামালের হাতে মন্ত্রণালয়টির গুরুভার তুলে দেওয়ার দিন তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনীতির দেশ হিসেবে জি টোয়েন্টিতে (জি-২০) দাওয়াত পেয়ে অংশগ্রহণ করতে পারব বলে আমি আশাবাদী।’

বাংলাদেশকে কোথা থেকে কোথায় টেনে তুলেছেন তিনি? অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্ত যদি একটু খতিয়ে দেখা যায়, তাহলেও তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ছিল ৬ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চার গুণ বাড়িয়ে এ আকার ২৫ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেন আবদুল মুহিত। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ৪৪ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।

জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খেত সব সময়। বেসরকারি খাতনির্ভর দেশের অর্থনীতিকে এমনভাবে ব্যবস্থাপনা করেছেন আবদুল মুহিত যে প্রবৃদ্ধির হারকে তিনি প্রথমবারের মতো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নিয়ে যান ৭ শতাংশের বেশি। মুহিতের সর্বশেষ বাজেট ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর এ হার এমনকি ৮ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়।

যেসব দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলার বা তার নিচে, বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় সেগুলোই হচ্ছে নিম্ন আয়ের দেশ। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয় তাঁর সময়েই। ২০১৫ সালের ১ জুলাই এ ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক।

এদিকে আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার ৯ মাস আগেই ২০১৮ সালের মার্চে বাংলাদেশ অর্জন করে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা। জাতিসংঘ তখন এ ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বে তিন ধরনের দেশ রয়েছে—উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত। জাতিসংঘ হিসাবটি করে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা বা সংকট সূচক অনুযায়ী।

আবদুল মুহিত মারা যাওয়ার পর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রবৃদ্ধিতে গতি আনা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানব উন্নয়ন—এ তিন বিষয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনেক অবদান। এ অবদানের জন্য স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। খাত তিনটির জন্য তিনি নানা নীতি গ্রহণ করেন।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবদুল মুহিত দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০০৭-০৮ সময়ে ছিল বিশ্বমন্দা। তাঁর সময়েও ওই মন্দার রেশ ছিল। নিত্যপণ্যের দাম তখনো ঊর্ধ্বমুখী। ঝুঁকির মুখে রপ্তানি। রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা দিয়ে তিনি ঠিকই ওই সময়ে পরিস্থিতিকে অনুকূলে আনতে পেরেছিলেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি শুরু করেন ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ। তিনিই প্রথম বাজেটকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি, অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকায় উন্নীত করেন।

উচ্চাভিলাষী ছিলেন দেশের জন্য

আবুল মাল আবদুল মুহিত যখনই বাজেট উপস্থাপন করতেন জাতীয় সংসদে, একধরনের সমালোচনা থাকত যে বাজেটগুলো উচ্চাভিলাষী হচ্ছে। টানা পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর দ্বিতীয়বারের প্রথম বাজেট (২০১৪-১৫ অর্থবছর) সংসদে উপস্থাপিত হওয়ার পরের দিন সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘উচ্চাভিলাষ দেশের জন্য ভালো, দেশের মানুষের জন্যও ভালো। প্রথম বছর থেকেই আমি উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে আসছি। আমি উচ্চাভিলাষী, আমার সরকার উচ্চাভিলাষী, আমার সব বাজেট উচ্চাভিলাষী।’

মুহিত ওই দিন এ–ও বলেছিলেন, উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়েই তিনি বসে থাকেননি, ব্যয় করার সামর্থ্যও দ্বিগুণ করেছেন। তাঁর উচ্চাভিলাষ যে সব সময় সার্থক হয়, তা তিনি পাঁচ বছরে প্রমাণও করেছেন।

অবকাঠামো উন্নয়নে পিপিপি চালু

অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আবদুল মুহিত ঠিকই বুঝেছিলেন, অবকাঠামো উন্নয়নে নজর দিতে হবে। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে তা কঠিন। ২০০৯-১০ অর্থবছরেই তিনি অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) খাতে প্রথমবারের মতো মোট ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখেন।

বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে রাজস্ব প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাবও করেন তিনি এবং পিপিপির জন্য ‘নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস’ নামে আলাদা একটি অবস্থানপত্র উপস্থাপন করেন। এতে মুহিত বলেছিলেন, জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ ব্যয় বর্তমানের ২৪–২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে ৩৫–৪০ শতাংশে। আগামী পাঁচ বছরে এ জন্য দরকার অতিরিক্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। পিপিপি উদ্যোগে এ বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে, ঢাকা মহানগরে পাতালরেল, ঢাকা মহানগর বেষ্টন করে মনোরেল, ঢাকা মহানগরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর-ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিভিন্ন এলাকায় কয়লাভিত্তিক অথবা ডিজেল ও গ্যাসভিত্তিক ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের ধারণা মুহিতই প্রথম দেন।

এরপর পিপিপি আইন হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন গঠিত হয় পিপিপি কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত ৭৯টি প্রকল্প পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।

নতুন নতুন ধারণার প্রবক্তা

আয়-ব্যয়ের হিসাব, বাজেট ঘাটতি, ঋণ—এসব বাজেটই থাকে। কিন্তু প্রতিবারই বাজেটে কোনো না কোনো নতুন ধারণা নিয়ে আসতেন আবদুল মুহিত।
২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকেই আবদুল মুহিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে কথা বলে আসছিলেন। তাঁর সময়ে একটি অবস্থানপত্রও তৈরি করা হয়েছিল। পরে আর এটি এগোয়নি। বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে এবং তাঁদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার, তা বেশির ভাগ প্রবীণেরই থাকে না। ফলে শেষ বয়সে তীব্র অর্থকষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করেন তাঁরা।’

মুহিতের ধারণাই বাস্তব রূপ দেখতে যাচ্ছে এখন। আগের ধারণাপত্রেরই বর্ধিত অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন অবস্থানপত্র। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সায় দিয়েছেন, বেসরকারি খাতের চাকরিতে নিয়োজিত ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের কথা মাথায় রেখে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে।
আঞ্চলিক সমতা নিশ্চিত করতে জেলা বাজেট সহায়ক হবে বলে সব সময় বিশ্বাস করতেন মুহিত। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে টাঙ্গাইল দিয়ে জেলা বাজেটের যাত্রা শুরু করেন। পরের অর্থবছরে যোগ করেন আরও ছয় জেলা। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ যে পুস্তিকা বের করে, তার মুখবন্ধে আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হলে নতুন মাত্রা পাবে এ জেলা বাজেট। আমি সেদিনের স্বপ্ন দেখি, যখন জাতীয় বাজেট শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে প্রণীত বাজেটই হবে না; বরং এটি হবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চাহিদার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিফলন।’

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু। শিশু বাজেট প্রতিবেদন ২০১৯-২০ অনুসারে, দেশে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ। ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, বসনিয়া, হার্জেগোভিনা, চীন, ইকুয়েডর, ঘানা, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশেই শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এ তথ্য উল্লেখ করে আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো শিশু বাজেট প্রণয়ন করেন। ‘শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা’ শিরোনামে একটি পুস্তকও প্রকাশ করা হয় ওই বছর।

পরের অর্থবছরে শিশু বাজেটের জন্য শিশুদের কাছ থেকে মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়াও চালু করেন আবদুল মুহিত। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘শিশুদের বাজেট পাঠ সহায়িকা ২০১৬-১৭’ শীর্ষক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মুহিত শিশুদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের আগে বাজেটে তোমরা কী কী চাও, তা জানাতে এখন থেকেই চিন্তাভাবনা করো। তোমরা স্কুলে নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়েও মতামত পাঠাতে পারো।’

যদিও জেলা বাজেট পরে আর টেকেনি। করোনা আসার পর শিশু বাজেটও আর করা হচ্ছে না।

পেনশন তুলতে ভোগান্তির যুগ শেষ

সিঁড়িতে বসে একজন অবসরে যাওয়া নারী কাঁদছেন। কারণ, তাঁকে বলা হয়েছে, পেনশন তোলার জন্য যেসব জায়গায় তিনি সারা জীবন চাকরি করেছেন, সেসব জায়গা থেকে ‘সরকার কোনো টাকা পাবে না’ মর্মে অনাপত্তিপত্র নিয়ে আসতে হবে। অবসরে যাওয়া সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা পাওয়ার ভোগান্তির চিত্রটি এমনই ছিল। আবদুল মুহিত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে মাসিক পেনশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজ হিসাবে জমা’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেন।

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি জানান, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিতের চিন্তা, সাহস ও অনুপ্রেরণার কারণেই এ ভোগান্তির যুগ শেষ হয়েছে।’
এর পর থেকে সরাসরি ব্যাংক থেকেই মাসিক পেনশনের টাকা তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ জন্য বিল নিয়ে আর অফিসে অফিসে তাঁদের ঘুরতে হচ্ছে না। এমনকি ঘরে বসেই পেনশনাররা জানতে পারছেন, কত টাকা তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা হলো। ব্যাংক হিসাবে টাকার পরিমাণ উল্লেখসহ পেনশনধারীদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা চলে আসছে এখন।

উদ্বোধনের দিন মুহিত বলেছিলেন, ‘নতুন পদ্ধতিটি যুগান্তকারী। এটি শুরু করতে পেরে খুবই উৎফুল্ল লাগছে।’

সমালোচনাও আছে

এত কিছুর পরও আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনাও রয়েছে কিছু কম নয়। তাঁর সময়েই ব্যাংক খাতের বড় বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংকের এননট্যাক্স ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারি, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি, প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি হয়েছে তাঁর সময়েই।

এক ডজন ব্যাংক ও দেড় ডজন বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাঁর সময়ে। আবদুল মুহিত নিজে রাজি না থাকলেও এগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় দিতে হয়েছে বলে পরে গণমাধ্যমকে তিনি জানান। কোনো কেলেঙ্কারির হোতাদেরই কঠিন কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। এমনকি ব্যাংকগুলোর পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয়নি।

অনেক সময় বেফাঁস কথা বলেও তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর মুহিত বলেছিলেন, ‘বছরে ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সেখানে চার হাজার কোটি টাকা কোনো সংকট সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত নয়।’ এ ঘটনায় পরে মুহিত ২০১২ সালে সংসদে বলেছিলেন, ‘মনে হতে পারে যে দুর্নীতিপরায়ণদের উৎসাহ দেওয়া বা সহায়তা করার জন্য এটা বলা হয়েছে। আসলে তা নয়। আমি এ বক্তব্যের জন্য দুঃখিত।’

২০১৫ সালের জুলাইয়ে মুহিত বলেছিলেন, ‘যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ব্যাংকটিতে হরিলুট হয়েছে। আর এর পেছনে ছিলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। তাঁর ব্যাংকবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণেই বেসিক ব্যাংক সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে। তাঁর ব্যাংকবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো সমস্যা হবে না।’ এমনকি তিনি জাতীয় সংসদে হল-মার্ক কেলেঙ্কারি ও বেসিক ব্যাংক জালিয়াতি নিয়ে বলেছিলেন, ‘জালিয়াতদের ধরতে বাধা নিজের দলের লোক।’

২০২০ সালে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুহিত বলেছিলেন, ‘একটা ভুল করেছি আমি। ফারমার্স ব্যাংককে স্বাভাবিকভাবে মরতে দেওয়া উচিত ছিল।’ কেন মরতে দিলেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেছিলেন, ‘ভয়ে। একটা মরে গেলে তার ক্রমিক প্রভাব পড়ে পুরো খাতে। এখন মনে হচ্ছে, ফারমার্স ব্যাংককে মরতে দিলে অসুবিধা হতো না। ফারমার্স ব্যাংকে শুরু থেকেই ডাকাতি হয়েছে। এটা কোনো ব্যাংক ছিল না।’