মহামারির প্রভাব কাটিয়ে বেশ দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও বলছে, গত বছরে দেশটির অর্থনীতি বিগত কয়েক দশকের মধ্যে দ্রুততম হারে বেড়েছে। তবে চলতি বছরে এসে সেই প্রবাহ কমে যাবে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের। খবর বিবিসির।
মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। আর বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ হারিয়েছিলেন প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা ব্যয়ের কারণে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হয়। এ সহায়তা নিয়ে সে বছর প্রবৃদ্ধি যতটা খারাপ হওয়ার শঙ্কা ছিল তা হয়নি, যা গত বছরও অব্যাহত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, ১৯৮৪ সালের পর গত বছরই সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ হার প্রায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানি, উৎপাদন এবং শিশুযত্নের মতো খাতগুলোতে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাই অর্থনীতির এ প্রবৃদ্ধিতে নিজের সফলতা দেখছেন তিনি। বলেন, এ প্রবৃদ্ধি কেবল তাঁর সরকারের নেওয়া পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার কারণেই সম্ভব হয়েছে।
অবশ্য নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার প্রণোদনা ব্যয় কমিয়ে আনতে শুরু করে। অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভও বাড়িয়ে দিয়েছে সুদের হার। পাশাপাশি করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ আর উচ্চ মূল্যস্ফীতিও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব কারণে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির গতি চলতি বছরে কিছুটা কমে যাবে। বিশ্বব্যাংকও জানিয়েছে, চলতি বছরে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে মার্কিন অর্থনীতি, যা গত বছরের চেয়ে কম। এসব উদ্বেগের মধ্যে মার্কিন স্টক মার্কেটগুলোতে টানা তিন সপ্তাহের মতো দরপতন হয়েছে। সূচকের এ নিম্নগতি আরও বাড়তে পারে।
লন্ডনভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটল ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু হান্টার বলেন, করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের শুরুতে অর্থনীতি গতিটা কিছুটা শ্লথ। বছর শেষেও হয়তো কোনো আশার আলো থাকবে না।
এদিকে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চাপে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। তাই প্রতিষ্ঠানটি আগামী মার্চ মাস থেকে ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো মূল সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
মার্কিন বহুজাতিক আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ওয়েলস ফার্গোর অর্থনীতিবিদেরাও জানিয়েছেন, ‘এখন থেকে প্রণোদনার মতো আর্থিক নীতি কমে গিয়ে উল্টো কঠোর আর্থিক নীতি আসবে। এ পরিস্থিতির মধ্যে কতটা ভালোভাবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারি, সেটাই হবে আগামী বছরগুলোতে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’