আমেরিকার ডলারের তুলনায় আবার কমেছে ভারতীয় রুপির মান। আজ মঙ্গলবার বাজার খোলার পরে ডলারপ্রতি রুপির দাম নেমে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৭৮ রুপিতে। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মে মাস থেকে ধারাবাহিক পতনের পর ডলার পিছু রুপির দামে কিছুটা উন্নতি দেখা গিয়েছিল জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। দুই দফায় আমেরিকান ডলারের তুলনায় রুপির দাম সামান্য বেড়েছিল। ১৪ জুন যেখানে ডলারপিছু দর ছিল ৭৮ রুপি ৪ পয়সা, ১৫ জুন তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৭৭ রুপি ৯৯ পয়সা।
কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে আবার পড়তে শুরু করেছে রুপির দাম। সোমবার বাজার বন্ধের সময় ডলারপ্রতি রুপির দাম ছিল ৭৭ টাকা ৩৪ পয়সা। মঙ্গলবার বাজার খোলার পর তা ৪৪ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ টাকা ৭৮ পয়সা। ভারতের জ্বালানির দুই-তৃতীয়াংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে অবমূল্যায়ন ঘটছে রুপির।
দ্য ইউএস ডলার ইনডেক্স অনুযায়ী, গত ২০ বছরের মধ্যে ডলারের মান এখন সবচেয়ে বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ মুহূর্তে ডলারের সাপেক্ষে অন্যান্য মুদ্রার দামের পতনের বহুবিধ কারণ থাকলেও, প্রধান কারণ দুটি। এক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পেট্রোলিয়াম থেকে রকমারি পণ্য—সবকিছুরই দাম বেড়েছে; অর্থাৎ ডলারের অঙ্কে সেই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। বহু ক্ষেত্রেই আমদানির পরিমাণ যেহেতু অন্তত স্বল্প মেয়াদে কমানো অসম্ভব, ফলে আমদানি খাতে ব্যয় বাড়ছে। শুধু ভারতে নয়, সব দেশেরই। তাতে ডলার মূল্যবান হয়েছে, উল্টো দিকে স্থানীয় মুদ্রার দাম পড়ছে।
দ্বিতীয় কারণটি হলো, আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে। সারা পৃথিবীতে আর্থিক ক্ষেত্রে তুমুল অনিশ্চয়তা চলছে, এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন। সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলার সে দেশেই জমা রাখা লাভজনক, নিরাপদ। ফলে ভারতের মতো বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার ঢল শুরু হয়েছে। গোটা এশিয়াতেই স্থানীয় মুদ্রা এখন দুর্বল—চীনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন—সব কটিরই পতন ঘটছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশেও মুদ্রার পতন হয়েছে।