ব্যাপক হারে মামলা-জরিমানা প্রতিকার দাবি ব্যবসায়ীদের

তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে ট্রাকে বেশি পণ্য আনার অভিযোগে আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৯৯টি মামলা দায়ের ও তাঁদের আড়াই কোটি টাকা জরিমানা।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্ক স্টেশন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু ট্রাকে বেশি পণ্য আনার কথা বলে আমদানিকারকদের নামে গণহারে মামলা দায়ের ও তাঁদের জরিমানা করা হচ্ছে। গত তিন মাসে এ রকম মামলা হয়েছে চার হাজারের বেশি, যেটাকে ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘হয়রানিমূলক’ বলছেন আমদানিকারকেরা।

মামলা ও জরিমানায় নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, এ তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানিতে তাঁদের নিরুৎসাহিত করতে এসব করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কয়লা আমদানি করা দেশের বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা গণহারে মামলা ও জরিমানা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আমদানিকারকেরা।

এদিকে শুল্ক স্টেশনগুলোর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনেই কাজ করছেন। এখানে হয়রানির কিছু নেই। যাঁদের ট্রাকে পণ্য বেশি আসছে, তাঁদের জরিমানা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনের শুল্ক তত্ত্বাবধায়ক মৃদুল কান্তি দাস চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যা করছি, তা আইনের মধ্যে থেকেই করছি। ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ সত্য নয়।’

জানা গেছে, গত তিন মাসে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৯৯টি। এর মধ্যে বড়ছড়ায় ২ হাজার ১৪১টি, চারাগাঁওয়ে ১ হাজার ৪০৫টি ও বাগলীতে ৫৫৩টি। এসব মামলায় আমদানিকারকদের জরিমানা দিতে হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এই সময়ে কয়লা আমদানিতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রতি টন কয়লা আমদানির বিপরীতে শুল্ক নেওয়া হয় ২ হাজার ৫০ টাকা।

স্থানীয় আমদানিকারকদের দাবি, আগে কখনো এত মামলা বা জরিমানা দিতে হয়নি। তিন মাস ধরে এসব চলছে। ভারতে পণ্য পরিমাপ করা হয় ওজন মেশিনে। আর এখানে মাপা হয় ফিতা দিয়ে, যা নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। এ জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখা হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ তিন শুল্ক স্টেশনে চার শতাধিক আমদানিকারক রয়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন এলাকার ২০ হাজার শ্রমিক। মামলা ও জরিমানার কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বেকায়দায় পড়েছেন। কারণ, আগে যেখানে দিনে ৪০০ ট্রাক কয়লা আসত, সেখানে এখন আসে ১০০ ট্রাকের কম। ব্যবসায়ীরা বলেন, শুল্ক স্টেশনগুলো থেকে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব পেলেও দীর্ঘদিনেও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। রাস্তাঘাটও ভাঙাচোরা। থাকার ব্যবস্থা না থাকায় জেলা শহর থেকে ৪০-৪২ কিলোমিটার দূরের শুল্ক স্টেশনে গিয়ে কাজ শেষ করে ব্যবসায়ীদের ফিরতে হয়। তাহিরপুরের পাটলাই নদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় শুকনা মৌসুমে পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

কয়লা আমদানিকারক মো. শামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কার স্বার্থে এত এত মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’ তিনি বলেন, করোনার কারণে সংকটে পড়া ব্যবসায়ীদের সরকার নানাভাবে সহযোগিতা করছে। অথচ এখানে ঠিক তার উল্টোটা ঘটছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনের শুল্ক তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মামলা, জরিমানার উদ্দেশ্য হচ্ছে অতিরিক্ত পণ্য আনা নিরুৎসাহিত করা। এখন যদি কাউকে বাড়তি পণ্য আনার জন্য জরিমানা না করে শুল্ক আদায় করা হয়, তাহলে তিনি পরবর্তীকালে পাঁচ টন বেশি আনবেন।’