‘প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের খালি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা লুটেরা। কদিন ধরে লাগাতার এসব বলা হচ্ছে। কথাগুলো শুনতে আমি আগ্রহী নই। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অনেক কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এসব ছাড়ের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা বহু বছর ধরেই। সরকার একটু একটু করে কমাচ্ছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট সংলাপে আজ শনিবার কথাগুলো বলেছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির।
সংলাপে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি ছিলেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বিভিন্ন পর্যালোচনা তুলে ধরেন এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘আগে একটা ধুয়া তোলা হতো এনজিওদের বিরুদ্ধে। বলা হতো, কিস্তির টাকার জন্য তারা টিনের চাল খুলে নিয়ে যায়। এবার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। অথচ ব্যবসায়ীদের সরকার এক হাতে দেয়, অন্য হাতে তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়।’
সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ১০ মাসে আয় এত কম আয় হয়েছে যে বাকি দুই মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১২২ শতাংশ। ব্যয় সক্ষমতার অবস্থাও ভালো নয়। কোভিডের কারণে যেই অর্থবছরে ব্যয় বেশি হওয়ার দরকার ছিল, সেই অর্থবছরেই সম্প্রসারণমূলকের পরিবর্তে সংকোচনমূলক বাজেট হয়েছে।
পাঁচ বছর আগের একটি উদাহরণ দিয়ে নিহাদ কবির বলেন, এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা দাবি করে তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে তা কেটে নেওয়া হয়েছে। এই নেওয়াটা যৌক্তিক কি না, তা যাচাই করতে হয়তো ৬ থেকে ৭ বছর লেগে যাবে। অথচ নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নিহাদ কবির বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম আয়করের শত শত কোটি টাকা আটকে আছে। এগুলো কীভাবে সমন্বয় হবে? কোনো কোম্পানির পক্ষে তো এত মুনাফা করা সম্ভব না।’ নীতি নির্ধারণ ও কর আহরণ একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি।
সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ১০ মাসে আয় এত কম আয় হয়েছে যে বাকি দুই মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১২২ শতাংশ। ব্যয় সক্ষমতার অবস্থাও ভালো নয়। কোভিডের কারণে যেই অর্থবছরে ব্যয় বেশি হওয়ার দরকার ছিল, সেই অর্থবছরেই সম্প্রসারণমূলকের পরিবর্তে সংকোচনমূলক বাজেট হয়েছে। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়েনি, ৮ শতাংশ। অথচ নতুন বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। কীভাবে তা অর্জন সম্ভব হবে?
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ এখনো ১ শতাংশের নিচে বলে সমালোচনা করেছে সিপিডি। বলেছে, কৃষি খাতেও বরাদ্দ কমেছে। অথচ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।
সংলাপে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ আবদুল হামিদ এবং ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নুরুল গণি।
এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা, তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রধান নির্বাহী কল্পনা আক্তার।