চলতি অর্থবছরের এডিপি

বরাদ্দের টাকা ব্যয়ে ব্যর্থ স্বাস্থ্য খাত

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সার্বিকভাবে এডিপির ৪৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

করোনা মহামারিতে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য খাত। এই সময়ে চিকিৎসার অপ্রতুলতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে প্রাণ গেছে অনেকের। অথচ চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা খরচ করতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আর মাত্র দুই মাস (মে-জুন) বাকি। এই দুই মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৮ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। তার মানে প্রতিদিন খরচ করতে হবে ১৪৭ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য মোট বরাদ্দ করা হয় ১২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা, আর স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ ১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা পেয়েছে। আইএমইডি বলছে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এই দুটি বিভাগের অধীনে চলমান ৬৮টি প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। তার মানে এডিপি বরাদ্দ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বাকি দুই মাসে ৮ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে, যা প্রথম ১০ মাসের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার এখন পর্যন্ত দুটি বড় প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার একটিতে অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, অন্যটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর তড়িঘড়ি করে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় গত অর্থবছরে দুটি প্রকল্পে আশানুরূপ টাকা খরচ হয়নি।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস জুলাই-এপ্রিলে সার্বিকভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্ধেক টাকাও খরচ হয়নি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এই সময়ে খরচ করতে পেরেছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা বা ৪৯ শতাংশ, যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫০ শতাংশ।

এডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থবছরের বাকি দুই মাসে খরচ করতে হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ২ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী অর্থবছরের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫০ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২৫ শতাংশ। এই হার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ৩৬ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ৩০ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ৬ শতাংশ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ২৯ শতাংশ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ১৬ শতাংশ।

বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৫৪ শতাংশ টাকা খরচ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগ।