প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমার শঙ্কা

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিআইসিএমের বাজেট-উত্তর সেমিনারে বলা হয়, এবারের বাজেটে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত হয়েছে।

শেয়ারবাজার

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ আয়ের ওপর উৎসে কর বৃদ্ধি ও সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বিপরীতে মূলধনি আয়ের ওপর করারোপ করা হয়েছে।

এতে দেশের শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমতে পারে বলে মনে করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটস (বিআইসিএম)। পুঁজিবাজারবিষয়ক এই প্রতিষ্ঠান গতকাল মঙ্গলবার বাজেট-উত্তর সেমিনারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইসিএমের গবেষণা ফেলো সুবর্ণ বড়ুয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সজীব হোসেন। তাঁরা বলেন, ‘বাজেটের দিন উপস্থাপিত অর্থবিলে নতুন বিধান সংযোজনের মাধ্যমে করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমার ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে।

সেই পরিবর্তনের ফলে সাধারণভাবে যেটা মনে হচ্ছে, তা হলো করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের ওপর থেকে সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বাজারে একধরনের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। অথচ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

ফলে আমরা বুঝতে পারছি না করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা আছে, নাকি সেটি উঠে গেছে। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। যদি করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা তুলে নেওয়া হয়, তাহলে তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে।’

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ আয়ের ওপর উৎসে কর বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থেকে মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। এর ফলে শেয়ারবাজারে কোম্পানির বিনিয়োগ যেমন কমবে, তেমনি সরকারি সিকিউরিটিজেও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। তাই প্রস্তাবিত এসব বিধান তুলে নেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রবন্ধে।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়করমুক্ত রয়েছে। কিন্তু অর্থবিলে এ-সংক্রান্ত একটি নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছে। তাতে সাধারণভাবে মনে হচ্ছে, এ সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা এনবিআরের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা পাচ্ছি না। এদিকে বাজেটের আগে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল। বাজেটে সেই দাবি পূরণ হয়নি। উল্টো বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।’

বিআইসিএমের নির্বাহী সভাপতি মাহমুদা আকতারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া ও পুঁজিবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি জিয়াউর রহমান।

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, শেয়ারবাজারে বর্তমানে চাহিদা কম। এ অবস্থায় বাজারে শেয়ারের সরবরাহে কিছুটা রাশ টানা দরকার। এ ছাড়া সুশাসনের ঘাটতি ও কারসাজির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটও বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করহারের ব্যবধান কমপক্ষে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন।