ঘুষ দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য কুখ্যাতি কুড়ানো ডাচভিত্তিক জ্বালানি বিক্রেতা কোম্পানি ভিটল। সেই ভিটলেরই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। এই ভিটল এশিয়া থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার দুটি আলাদা প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
অনলাইনে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী অনুমোদনের কথা সাংবাদিকদের জানান। প্রস্তাব দুটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের। আর তা বাস্তবায়নকারী সংস্থা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন সংস্থা পেট্রোবাংলা।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, পেট্রোবাংলার মাধ্যমে ৬ষ্ঠ এলএনজি কার্গোর আওতায় ভিটল এশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৩১১ কোটি টাকায় এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৭ম এলএনজি কার্গোর আওতায় একই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ৩১৩ কোটি টাকায় এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এগুলো কেনা হবে স্পট মার্কেট থেকে।
স্পট মার্কেট থেকে কেনার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে অনেক সময় এলএনজি পাওয়া যায় না। সে জন্য স্পট থেকে কেনার চেষ্টা করছি। স্পট থেকে কেনার অভিজ্ঞতাও আমাদের জন্য নতুন। দীর্ঘদিন থেকে আমরা এভাবে কিনিনি। কিন্তু এখন যেহেতু আমাদের এলএনজি দরকার, তাই কিনছি। তবে বিভিন্ন উৎস থেকে দীর্ঘ মেয়াদে কেনার যে চুক্তি রয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকছে।’
বিভিন্ন দেশে কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি থেকে বাংলাদেশ কেন এলএনজি কিনতে গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে তো এটা কালো তালিকাভুক্ত নয়। বিভিন্ন দেশে তারা ব্যবসা করে। আমাদের দেশে তো এখনো ব্যবসাই করেনি। আমরা এলএনজি কিনছি আমাদের স্বার্থে। এটা মনে রাখবেন যে তারা কালো তালিকাভুক্ত হলেও আমাদের তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’
সাংবাদিকেরা আবার জানতে চান, যাদের অতীত ইতিহাস খারাপ, তাদের থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করবে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, তারা যে কালো তালিকাভুক্ত, এটা তাঁর জানা নেই।
প্রশ্নকারী সাংবাদিকের কাছে অর্থমন্ত্রী জানতে চান, তিনি কীভাবে জানেন কোম্পানিটি কালো তালিকাভুক্ত? কোন কোন দেশে কালো তালিকাভুক্ত? জবাবে সাংবাদিক জানান, গুগলে সার্চ দিলেই কোম্পানিটির সবকিছু জানা যায়।
গুগলে সার্চ দিয়ে দেখা গেছে, মূল ভিটলের কার্যকলাপ নিয়ে ব্লুমবার্গসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, ফ্রান্স, সার্বিয়া, লিবিয়া প্রভৃতি দেশে কীভাবে কাজ পেয়েছে ভিটল এবং ধরা পড়ে জরিমানা গুনেছে, প্রতিবেদনগুলোতে সেসব বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতের রায়ে ভিটলকে বিশাল অঙ্কের জরিমানাও দিতে হয়েছে।