চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যের চাপ সামলাতে এবার বেসরকারি জেটি ব্যবহার

জট কমাতে এই উদ্যোগ। পর্যায়ক্রমে সব বিশেষায়িত জেটি ব্যবহার হবে। তাতে সাশ্রয় হবে জাহাজের ক্ষতিপূরণ বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা।

  • ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরোনো লোহার টুকরাবাহী প্রতিটি জাহাজ গড়ে ১৫ দিন অপেক্ষা করেছে।

  • মাঝারি আকারের এসব জাহাজের ভাড়া এখন দিনে ১১-১২ হাজার ডলার।

আমদানি পণ্য দ্রুত খালাস ও জাহাজজট কমাতে বেসরকারি জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারই অংশ হিসেবে কর্ণফুলী ড্রাইডকে ভিড়বে জাহাজ

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে গত জানুয়ারি থেকে পণ্য আমদানির চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে। আসছে প্রকল্পের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি। এই চাপে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজের জট বাড়ছে বন্দরে। বন্দরের নিজস্ব জেটি দিয়ে এই জট সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। চাপ সামলাতে তাই এবার বেসরকারি খাতের বিশেষায়িত জেটি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে বেসরকারি খাতের কর্ণফুলী ড্রাই ডক লিমিটেডের জাহাজ মেরামতের নতুন নির্মিত দুটি জেটি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপর আমদানিকারকদের চাহিদানুযায়ী পর্যায়ক্রমে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার বিশেষায়িত জেটি ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে বন্দর।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, পণ্য আমদানির চাপ বাড়লেও জাহাজ যাতে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে না হয়, সে জন্যই এই উদ্যোগ। জাহাজ অলস বসে না থাকলে ক্ষতিপূরণ বাবদ বৈদেশিক মুদ্রাও ব্যয় করতে হবে না। দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এ জন্য বন্দরের নিজস্ব জেটির বাইরে কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটির মতো সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সব বিশেষায়িত জেটি ব্যবহারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জটের কারণে কয়েক বছর ধরে অনিয়মিতভাবে নৌবাহিনী পরিচালিত জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ড্রাই ডকের জেটি ব্যবহার করে আসছে বন্দর। এ ছাড়া আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী বিচ্ছিন্নভাবে মাঝেমধ্যে আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থার বিশেষায়িত জেটি ব্যবহার হতো। তবে বেসরকারি জেটি ব্যবহারের উদ্যোগ এবারই প্রথম।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানোর বিশেষায়িত জেটি রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের তিনটি এবং পাঁচটি সরকারি সংস্থার সাতটি জেটি রয়েছে। বন্দরের জমি লিজ নিয়ে এসব জেটি নির্মাণ করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। কর্ণফুলী ড্রাই ডকের জেটি দুটি নতুন নির্মাণ হয়েছে এ মাসে। এসব জেটি ব্যবহার হলে মাশুলের ভাগ পাবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাও।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, নতুন দুটি বাদে গত বছর আটটি জেটির ব্যবহারের হার ছিল গড়ে ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ২৪৮ দিন এসব জেটি ব্যবহারই হয়নি। নিজেদের পণ্য না থাকায় এসব জেটি খালি ছিল। অন্যদিকে বন্দরের সাধারণ পণ্য ওঠানো-নামানোর নিজস্ব ছয়টি জেটি গত বছর ব্যবহারের হার ছিল সাড়ে ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ জোয়ারের সময় জাহাজ আসা-যাওয়ার বিরতি ছাড়া জেটি খালি ছিল না এক দিনও।

বহির্নোঙরে যেসব পণ্য খালাসে অসুবিধা, সেগুলোই মূলত জেটিতে এনে খালাস করা হয়। সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য বন্দরের নিজস্ব জেটি রয়েছে ছয়টি। এই ছয়টিতে বড়জোর পাঁচটি জাহাজ ভিড়ানো যায়। পণ্য আমদানি বাড়ায় জেটি সংকটে বছরের বেশির ভাগ সময় বহির্নোঙরে এ ধরনের জাহাজগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হয়। আমদানি পণ্যের চাপের সঙ্গে এ বছর যুক্ত হয়েছে চালবাহী জাহাজ। এখন বন্দরে প্রায়ই সরকারি চালবোঝাই জাহাজ থেকে চাল খালাসকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। জাহাজ থেকে চাল খালাসে সময়ও লাগে বেশি। অথচ খাদ্য বিভাগের বিশেষায়িত জেটি থাকলেও সেখানে জাহাজ ভিড়ানো হচ্ছে না।

আবার গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরোনো লোহার টুকরাবাহী প্রতিটি জাহাজ গড়ে ১৫ দিন অপেক্ষার পর জেটিতে ভিড়ানো হয়েছে। মাঝারি আকারের এসব জাহাজের ভাড়া এখন দিনে ১১-১২ হাজার ডলার। তাতে একেকটি জাহাজের ক্ষতিপূরণ বাবদ লাখ ডলারের বেশি অর্থ বাড়তি খরচ করতে হয়েছে আমদানিকারকদের। এই মাশুল পরোক্ষভাবে দিচ্ছেন ভোক্তারা। এ পরিস্থিতিতে বিশেষায়িত জেটি ব্যবহার করতে চাইছেন আমদানিকারকেরাও।

জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষায়িত জেটি ব্যবহার হলে অবশ্যই সুফল পাবেন শিল্পের কাঁচামাল আমদানিকারকেরা। জেটিতে ভিড়ানোর অপেক্ষায় বহির্নোঙরে জাহাজ অলস বসে থাকার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। জাহাজ যদি দ্রুত খালাস করে বন্দর ছেড়ে যায়, তাহলে বিদেশে এই বন্দরের ভাবমূর্তি বাড়বে।