বৈদেশিক বাণিজ্য

নেদারল্যান্ডসে পাটপণ্য রপ্তানির নামে প্রতারণা

নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পাটের বস্তা রপ্তানি করেনি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

  • রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসে প্রায় ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩ শতাংশের বেশি।

  • ডাচ প্রতিষ্ঠানটির আশঙ্কা, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটি আরও অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

পাটপণ্য

নেদারল্যান্ডসের ইন্টারবাল্ক প্যাকেজিং বিভি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাটের বস্তা রপ্তানির চুক্তি করেছিল বাংলাদেশি রপ্তানিকারক সেকেন্ডস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড। এ জন্য অগ্রিম টাকাও নিয়েছিল। তবে পাটের বস্তা রপ্তানি করেনি। তিন মাসের বেশি সময় ধরে যোগাযোগও করছে না।

এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে ডাচ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে জানিয়েছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পণ্য কিংবা আগাম দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে তারা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করবে। ইন্টারবাল্ক প্যাকেজিং এরই মধ্যে তথ্যপ্রমাণসহ নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি সুরাহার অনুরোধ জানিয়েছে।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সম্প্রতি প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। সূত্র আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি সুরাহার জন্য গত সপ্তাহে বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনকে (এফবিসিসিআই) চিঠি দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহ গত শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারবাল্ক নেদারল্যান্ডসের একটি অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এটি কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য ২৩ বছর ধরে বিপুল পরিমাণে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি করে আসছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে। দেশীয় পণ্যের বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তির স্বার্থে দ্রুত বিষয়টির সুরাহা হওয়া উচিত।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসে প্রায় ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩ শতাংশের বেশি।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ডাচ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার বিষয়টি দূতাবাস প্রথম জানতে পারে জানুয়ারির শুরুতে। এরপর ১৫ জানুয়ারি এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয় ইন্টারবাল্ক প্যাকেজিং। প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করে, ঢাকার পুরানা পল্টনের ঠিকানা দেওয়া সেকেন্ডস ইন্ডাস্ট্রি পাটের বস্তা রপ্তানির জন্য অগ্রিম ২ লাখ ডলার (১ কোটি ৭০ লাখ টাকা) নিয়েছে। তারা পণ্য সরবরাহের জন্য তিন দফা সময় বাড়িয়ে নিয়েছিল। কিন্তু সরবরাহ করেনি। যোগাযোগ রাখছে না গত বছরের অক্টোবর থেকে। ডাচ প্রতিষ্ঠানটির আশঙ্কা, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটি শুধু তাদের সঙ্গেই নয়, আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করেছে।

এদিকে ডাচ প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের বিষয়ে জানতে সেকেন্ডস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরুল হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান সেকেন্ডস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে প্রথম আলো ইন্টারবাল্ক প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে গত সপ্তাহে ই–মেইলে যোগাযোগ করে। ইন্টারবাল্ক প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যাক্স ফিশার গতকাল মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডস থেকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সেকেন্ডস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পাসপোর্ট জব্দ করার পাশাপাশি পাট পণ্য সমিতি থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছি। এর পাশাপাশি পুলিশের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে বলেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের আশঙ্কা অভিযুক্ত ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠান আরো প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে।’

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসকে দেওয়া ইন্টারবাল্কের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার প্রতারণার বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করতে ব্যর্থ হলে নেদারল্যান্ডস সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়ে তারা রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা করবে।