নাহিদ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ২৭৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে রাজধানীর লালবাগের নাহিদ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। একই সঙ্গে ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে পাওয়া ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকির অভিযোগটি আরও গভীরভাবে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলকে (সিআইসি) অনুরোধ করা হয়েছে।

লালবাগ বকশিবাজারের নাহিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন।

প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তর অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। পরে এই অনুসন্ধানের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির কাছে জুলাই, ২০১৫ থেকে জুন, ২০২০ সময়ের ভ্যাটসংক্রান্ত দলিলাদি চেয়ে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি কাগজপত্র না প্রেরণ করে চিঠি দিয়ে বারবার সময়ে চেয়ে কালক্ষেপণ করে। প্রতিষ্ঠানটি দলিলাদি দাখিল করে তদন্তকাজে সহযোগিতা না করায় ১৭ জুন ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তরের উপপরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ভ্যাটসংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায় যে মেসার্স নাহিদ এন্টারপ্রাইজ অন্যান্য বন্ডেড প্রতিষ্ঠান থেকেও বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর কারণে চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকিসংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

তারা প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য দেখিয়েছে ২৯১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৬ টাকা।

জব্দ করা নথিপত্র খতিয়ে দেখা যায়, প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ছিল ১ হাজার ৫৪০ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ২২ টাকা। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৫৪ টাকার প্রকৃত বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে। যেখানে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৫৭ কোটি ১২ লাখ ৭ লাখ ৯৯৩ টাকা আদায়যোগ্য। মাসে ২ শতাংশ সুদ হিসাবে আরও ১১৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ২৪২ টাকা প্রযোজ্য। সব মিলিয়ে মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৩২ লাখ ২ হাজার ২৩৫ টাকা। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হওয়ায় স্পষ্ট হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি নানা ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হয়েছে।

তদন্তে প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা প্রাইম ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখা ও উত্তরা ব্যাংকের চকবাজার শাখায় দুটো ব্যাংক হিসাবে মোট ১ হাজার ৫৪০ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ২২ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়, যা অবৈধ বন্ডেড পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত বলে প্রমাণ মিলেছে বলেও ভ্যাট গোয়েন্দা জানিয়েছে।