নকশা অনুমোদন না করেই পুরান ঢাকার হাটখোলায় বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সে কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এফবিসিসিআইয়ের নতুন লোগো ও সংস্কার করা মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনের (নতুন নাম এফবিসিসিআই আইকন) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ বুধবার সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘হাটখোলার ভবনটি তিন বছর ধরে পড়ে আছে। কারণ, ভবনটির নকশা পাস করা ছিল না। আমরা সম্প্রতি নকশা পাস করেছি।’ তিনি আরও জানান, মতিঝিলের ভবনের মালিকানা এখনো এফবিসিসিআইয়ের নামে নেই। মালিকানা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগিরই কাজটি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ক্ষমতায় থাকলে আইনকানুন তোয়াক্কা না করার প্রবণতা রয়েছে। নকশা পাস না করে ভবন নির্মাণ করা আমাদের গাফিলতি।শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ৭ মে ১৪ দশমিক ৪৩ কাঠা জমির ওপর ১৩ তলা এফবিসিসিআই ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনতলার বেসমেন্টসহ (১৬ তলা) ভবনটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩৬ কোটি টাকার বেশি। আর নির্মাণের দায়িত্বে ছিল ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)।
অনলাইনে আজ এফবিসিসিআইয়ের নতুন লোগো ও সংস্কার করা এফবিসিসিআই আইকন ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এ সময় অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, আবদুল মাতলুব আহমাদ, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ।
হাটখোলায় এফবিসিসিআই ভবন নিয়ে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকলে আইনকানুন তোয়াক্কা না করার প্রবণতা রয়েছে। নকশা পাস না করে ভবন নির্মাণ করা আমাদের গাফিলতি। ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনার পরও আমরা হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন হারিয়েছি। ইপিবির কাছ থেকে জমি কেনার পর নিবন্ধনের সময় দেখা গেল তারা মালিক নয়। মূল মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে ইপিবিকে জমি কাগজে–কলমে লিখে দেয়নি।’
নিজেদের খামখেয়ালির জন্য নিজেদের ক্ষতি করছি। নকশা অনুমোদন না করে ভবন করি।সালমান এফ রহমান , প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা
এফবিসিসিআইয়ের মূল সমস্যা দুটি বলে উল্লেখ করেন এ কে আজাদ। তিনি বলেন, প্রথম সমস্যা সংগঠনের নিজস্ব কোনো আয় নেই। আরেকটি হচ্ছে, আমরা ব্যবসায়ীরা এক জায়গায় সবাই বসে বৈঠক করতে পারি না। পূর্বাচলে বড় একটা জায়গা বরাদ্দ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, নিজেদের খামখেয়ালির জন্য নিজেদের ক্ষতি করছি। নকশা অনুমোদন না করে ভবন করি। তিনি এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পর্ষদের প্রশংসা করে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ বর্তমানে যেখানে আছে এফবিসিসিআইকে সেখানে আনার দরকার ছিল। সেই কাজটি করেছেন শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি বলেন, অর্থনীতির আয়তন বাড়ছে। সংগঠনও বাড়ছে। তাই এফবিসিসিআইয়ে কাঠামোগত সংস্কার দরকার।
এফবিসিসিআই আইকন ভবনের লবি, সভাকক্ষ ও মিলনায়তন সংগঠনটির সাবেক সভাপতিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে বলে জানান শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি বলেন, এফবিসিসিআইয়ের তার মূল কাজের পাশাপাশি কিছু লাভজনক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থাকবে। ইতিমধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। গত মাসে পর্ষদ সভায় ব্যাংক, বিমা, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করার অনুমোদন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। আর ফাউন্ডেশনের নেতৃত্ব দেবেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক নেতারা।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সংগঠনের উন্নয়নকাজের জন্য সরকারের কাছ থেকে টাকা আনার পক্ষপাতী না। প্রয়োজনে আমরা সরকারকে টাকা দেব।’