সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার কারণে গত অর্থবছরে সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা আবার বেড়েছে। শুরু হয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে গাড়ি কেনার তোড়জোড়। তবে অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, ঢালাও বিদেশ ভ্রমণ ও যানবাহন কেনা যাবে না। শুধু জরুরি ও অপরিহার্য প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়া যাবে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য যা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই তার অতিরিক্ত ব্যয় দাবি করা যাবে না বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ১৪ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে। গত জুলাই মাসে এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। নতুন পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের বাকি সময় উন্নয়ন ব্যয়ের টাকা অব্যবহৃত থাকলে তা কোনোভাবেই পরিচালন বাজেটে নেওয়া যাবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার কারণে গত অর্থবছরে সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে রাজস্ব আদায়ের হার কমে যাওয়ায় সরকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধন করছে।
পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। সরকারি ভ্রমণে ব্যয়ের জন্য যা বরাদ্দ আছে, তার ৫০ ভাগ ব্যয় করা যাবে। বিদেশ ভ্রমণ খাতের অব্যবহিত টাকা অন্য খাতে স্থানান্তর না করতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে যানবাহনও ঢালাওভাবে কেনা যাবে না। এ খাতে যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তার ৫০ শতাংশ খরচ করা যাবে। বাকি টাকা অন্য খাতে নেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে গত রাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশ ভ্রমণ ও যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে আগের অবস্থান অর্থাৎ কৃচ্ছ্র সাধনের কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সরকারের অগ্রাধিকার হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাত। তাই বিলাসী খাতে বেশি খরচ করা যাবে না।
বাজেট পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ছিল না এমন কোনো সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে টাকা চাওয়া যাবে না। সংশোধিত বাজেটে সরবরাহ ও সেবা খাতের বরাদ্দ বাড়ানো যাবে না।
সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বিষয়ে পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের মধ্যে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা, সেসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সংশোধিত বাজেটে প্রয়োজনীয় টাকা রাখতে হবে। সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে। প্রয়োজনে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাদ দিতে হবে। যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ধীর, সেই সব প্রকল্পের টাকা কেটে দ্রুত গতিসম্পন্ন প্রকল্পে নিতে পারবে মন্ত্রণালয়গুলো।