অর্থনীতির বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। করোনার কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের যে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল, সেটিকে আরও প্রকট করেছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। তাই অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংকটও তত বাড়বে। কারণ, বৈশ্বিক অস্থিরতা রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করবে। এ অবস্থায় উৎপাদক শ্রেণিকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের গরিব মানুষের জন্য খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে।
এ ছাড়া চলমান সংকট মোকাবিলায় ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে যত দেরি হবে, সমস্যাও তত বাড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ। রপ্তানিকারক ও ব্যাংকাররা চান, ডলারের বিনিময়মূল্যকে নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি ব্যাংকের সুদহারও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দেন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা।
প্রথম আলোর আয়োজনে ‘কোন পথে অর্থনীতি ও আগামীর বাজেট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা এসব কথা বলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত এ বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন। বৈঠকে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফসহ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলে এ আলোচনা।
বৈঠকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, অর্থনীতির সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কৃষি, রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও শিল্প খাত—এ চারটি হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির মূল চালক। বোরোর উৎপাদন ভালো হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, রপ্তানির ক্রয়াদেশও আসছে প্রচুর। প্রবাসী আয় কমার প্রবণতা কমেছে। আর গত ১০ বছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্প খাতের অবদান দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থনীতির এসব চলকের একটি দুর্বল হলে লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর কিছু প্রভাব পড়বেই। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপন করছি। কিন্তু অনেক তথ্যই আমাদের হালনাগাদ নেই।’ সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সময়ে আর্থিক খাতে যতটুকু সংস্কার হয়েছিল, তারপর আর কোনো সংস্কার হয়নি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজস্ব খাতের চেয়ে আর্থিক খাতের সংস্কার সবচেয়ে বেশি দরকার।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, আমাদের অর্থনীতির সমস্যাও তত দীর্ঘ হবে। ইতিমধ্যে আমাদের মূল বাজার—ইউরোপ, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। তারা পোশাকের আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। রপ্তানির ওপর সেটির সরাসরি প্রভাব পড়বে আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে।’
ডলারের সংকট কাটাতে প্রবাসী আয় সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক দর বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকে কত দামে রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে ও আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলো প্রতিদিন বাজার বিবেচনা করে এই দাম নির্ধারণ করবে। এই এক দাম সব ব্যাংককে মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যালোচনা করবে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই ডলারের দাম ৯০ টাকার বেশি হবে না বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে এ কে আজাদ বলেন, ‘দুই দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানিকারকদের জন্য ডলারের দরের একটা সীমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি আর হবে না। একই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতেও আমরা মার খেয়ে যাব। এই জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্ক হতে হবে।’ না হলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ কে আজাদ আরও বলেন, ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে। বরং এটা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। ব্যাংকের সুদহার নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটিও নিজস্ব গতিতে চলা উচিত। এখন কথা হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সুদের হার বেশি হচ্ছে কেন? কারণ, ব্যাংকিং খাতে তো শৃঙ্খলা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে তদারকি ব্যবস্থা, তা দিয়ে তাদের একার পক্ষে এতগুলো ব্যাংক ও শাখা তদারক করা সম্ভব নয়।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি আসলে কত? সরকারি তথ্য বলছে, এ হার ৬ শতাংশ। আসলে কি তাই? আমরা সিপিডি থেকে বলেছি, মূল্যস্ফীতি কারও কারও ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশের ওপরে। চালসহ কিছু মৌলিক পণ্যের দাম ৪০-৬০ শতাংশ বেড়েছে। প্রশ্ন হলো এই মূল্যস্ফীতির তথ্য সঠিক কি না। তাই প্রথম কথা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হিসাব না করে যতই নীতি নেন না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা বাজার অর্থনীতির কথা বলছি, আবার অন্যদিকে সংরক্ষণবাদী নীতিও নিয়েছি। প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী না করলে সবাই সুফল পাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু প্রবৃদ্ধি, বেকারত্ব নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কাজ অর্থ মন্ত্রণালয় করছে। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা নিয়ে কথা হচ্ছে।’
হুন্ডি একটি অপ্রতিরোধ্য বিষয় হয়ে গেছে বলে মত দেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, যত দিন টাকা পাচার বন্ধ না হবে, তত দিন হুন্ডি চলবে। অনেকে অভিবাসী হয়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। তাঁরা ১০, ৫০, ১০০ কেটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা তো এ দেশের ঘরবাড়ি ফেলে যাচ্ছেন না। এসব বন্ধে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি দুঃসাধ্য কাজ। আইনি কাঠামো নেই। যাঁরা চলে গেছেন, তাঁরা তো ওই দেশের অংশ হয়ে গেছেন। যেসব দেশে পাচারের টাকা যাচ্ছে, ওই সব দেশও বোঝে, এগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা। তারপরও তারা পাচার হওয়া অর্থ গ্রহণ করছে।
অর্থনীতিতে সংস্কার প্রসঙ্গে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা সংস্কার ভুলে গেছি। সংস্কার এখন ধরাছোঁয়ার বাইরের বিষয় হয়ে গেছে। রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় দরকার। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন না বাজার অর্থনীতি, না কেন্দ্রীভূত অর্থনীতি।’ তিনি আরও বলেন, দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা ও তথ্যপ্রযুক্তি—এই তিন বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আবার তথ্য–উপাত্ত নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত না থাকলে নীতি নির্ধারণও যথাযথ হয় না।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর কমাতে হবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ কর দিতে হয়। এখানে সংস্কার করা গেলে, ব্যবসায়ীদের স্বস্তি মিলবে। তা ছাড়া নিরীক্ষায় হয়রানি বন্ধ করা গেলে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আবুল কাসেম খান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানিনিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন গ্যাসকূপ আবিষ্কারে বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে হবে। তা ছাড়া আমাদের বিপুল পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে, যা দিয়ে আমাদের শিল্পকারখানা ৭৫ বছর চালানো যাবে। ফলে কয়লা ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কেন জানি বেসরকারীকরণ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের কাছে অনেক শিল্পকারখানা ও জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। এগুলোকে কাজে লাগানো দরকার।
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও অ্যাপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্রের বড় চেইন শপগুলোর আয় গত কয়েক মাসে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কমে গেছে। ওই সব দেশে বিক্রি কমে গেলে তার প্রভাব এসে আমাদের ওপরও পড়বে। সবাই বলছে, আমরা করোনা থেকে বেরিয়ে গেছি। কিন্তু আমি মনে করি, এখনো বেরোতে পারিনি। এখনো চীনে লকডাউন চলছে, দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না। পণ্য তৈরির খরচ বেড়ে গেছে।’ এ বাস্তবতায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষম হিসেবে গড়ে তুলতে করব্যবস্থায় সমতাবিধানের প্রস্তাব করেন তিনি।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, বর্তমানে রপ্তানিতে একেক খাতে একেক ধরনের করহার রয়েছে। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে অন্তত তিন বছরের জন্য হলেও সব উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের জন্য একই করহার করা দরকার। তাতে অনেক খাত উপকৃত হবে।
বর্তমান সংকটে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে যত বেশি দেরি হবে, সমস্যা তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, গত এক দশকের মধ্যে অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এখন। ডলারের বিনিময় হার গত এক দশকে একধরনের স্বস্তির জায়গায় থাকলেও এখন সেখানে চাপ তৈরি হয়েছে। তাই ডলারের দামকে এভাবে ধরে বেঁধে রাখা যাবে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোটেই অনুকূল নয়। বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে আমরা মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখছি। এর সঙ্গে ভূরাজনৈতিক বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। বিষয়গুলো এখন আমাদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কম। তাই বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সব ধরনের সমস্যাকে মাথায় রেখেই আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সেলিম রায়হান মনে করেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আমাদের ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কারণ, আমাদের মেগা প্রকল্পের বেশির ভাগই ঋণনির্ভর। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু মেগা প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা–পরবর্তী অর্থনীতির পুনরুদ্ধার যতটা দ্রুত হচ্ছে, সেই তুলনায় সামাজিক পুনরুদ্ধারের গতি খুবই কম। সরকার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বেশ মনোযোগী, তবে সামাজিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারে নজর কম। অথচ করোনা–পরবর্তী সময়ে দেশে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও মূল্যস্ফীতি সবই বেড়েছে। আর তার বড় ভুক্তভোগী সমাজের বড় একটি শ্রেণির মানুষ। তাই আগামী বাজেটে আমরা সামাজিক খাতের জন্য বড় মেগা প্রকল্প দেখতে চাই।’
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডলারের দাম ৯০ টাকার নিচে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো মূল্যস্ফীতি হয়ে গেছে। আর যাঁরা ডলার আনেন, সেই রপ্তানিকারকদের খরচও বেড়ে গেছে।
কারণ, কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া বেড়ে গেছে। ফলে বাস্তবতা একদিকে, আর অন্যদিকে আশার তরী। এখন ডলার নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে। ফলে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে উৎপাদন খাতের ক্ষতি করে ফেলছি।’ ডলারের পাশাপাশি সুদহারের সীমাও তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।
দেশের অর্থনীতিকে বড় করতে শিল্পায়ন কৌশল প্রণয়নের পরামর্শ দেন বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারম্যান রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, অর্থনীতিকে বড় করতে এই খাতে রাজস্ব প্রণোদনা দিতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে পণ্য ও জ্বালানি আমদানির পরামর্শ দেন তিনি।
উদ্যোক্তাবান্ধব বাজেট ও করকাঠামো করার পরামর্শ দেন ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিপ্লব ঘোষ। তিনি বলেন, বিদ্যমান প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক কাঠামোকে চিন্তা করে সব সরকারি নীতি নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের কথা তেমন মাথায় রাখা হয় না। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণকাঠামো ও অবকাঠামোগত বিষয়েও উদ্যোক্তারা সরকারি সহায়তা ঠিকভাবে পান না। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের উদ্যোক্তারা ঋণপ্রাপ্তি ও অবকাঠামোগত সুবিধা অতটা পান না।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান পাটপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তুলিকার স্বত্বাধিকারী ইশরাত জাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ব্যাংকঋণের জন্য একজন মাঝারি উদ্যোক্তার কাছে যে ধরনের কাগজপত্র চাওয়া হয়, একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার কাছেও একই ধরনের কাগজপত্র চাওয়া হয়। এটা কখনোই উদ্যোক্তাবান্ধব হতে পারে না। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সব ধরনের লাইসেন্স ফি পাঁচ বছরের জন্য অর্ধেক করার দাবি জানান তিনি।