সাড়ে ৫ মাস পর পর্যটন স্পট ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলছে কাল বৃহস্পতিবার। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পর্যটক টানতে দেওয়া হচ্ছে ছাড়।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে চান। এ জন্য গ্রাহক-দর্শনার্থী আকৃষ্ট করতে রিসোর্ট, বিনোদন পার্কগুলোর ফেসবুক পেজে চলছে ‘বুস্টিং’। চলছে নানা ধরনের ছাড়ের অফার। বিভিন্ন ধরনের সেবার ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। দেশের রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল ও বিনোদন পার্কগুলোতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সাড়ে চার মাস পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর আশপাশের রিসোর্টগুলোতে বুকিং কম থাকলেও কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে ১৯ ও ২০ আগস্টের জন্য অর্ধেক ধারণক্ষমতার রুম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
• বিনোদনকেন্দ্রে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি দর্শনার্থী নয়। • অতিথি আকৃষ্ট করতে রিসোর্টে নানা অফার। • টিকা দেওয়া থাকলে বিশেষ অফারের চিন্তাভাবনা। • পর্যটকের অপেক্ষায় কক্সবাজার। • সিলেটে পর্যটন ব্যবসায় কর্মচাঞ্চল্য।
সরকার পর্যটন খাত চাঙা করতে আগামীকাল থেকে অর্ধেক ধারণক্ষমতা খোলা রেখে বিনোদন পার্ক এবং পর্যটন এলাকার রিসোর্ট-হোটেল খোলার অনুমতি দিয়েছে। গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা এবং চট্টগ্রামের রিসোর্ট ও বিনোদন পার্কগুলোতে চলছে প্রস্তুতি।
কনকর্ড গ্রুপের কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্টের বেশ কয়েকটি এমিউজমেন্ট পার্ক আছে। যেমন আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, ওয়াটার কিংডম এবং চট্টগ্রামের ফয়’স লেক রিসোর্ট ও সি ওয়ার্ল্ড। কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব বিনোদন পার্কে কাল থেকে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাকি ৫০ শতাংশ ধারণক্ষমতা খালি রাখা হবে। ওয়াটার কিংডম ও সি ওয়ার্ল্ডে আপাতত ধারণক্ষমতার ২৫ শতাংশের বেশি দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেবে না কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব এমিউজমেন্ট পার্কস অ্যান্ড এট্রাকশন (বিএএপিএ) সমন্বয়ক ও কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যথেষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্ক চালু করা হচ্ছে। বিনোদন পার্কে আসা দর্শনার্থীদের জন্য আমরা আপাতত টিকিটের ওপর কোনো মূল্যছাড় দিচ্ছি না। কয়েক দিন আমরা অতিথিদের আচরণ দেখব। এরপর চিন্তাভাবনা করব।’ তিনি জানান, অনেক দিন বিনোদন পার্ক বন্ধ থাকায় এই খাতের বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। এখন টিকে থাকার লড়াই চলছে।
জানা গেছে, সাভারের নন্দন পার্ক, নরসিংদীর মাধবদীর ড্রিম হলিডে পার্ক, নারায়ণগঞ্জের হেরিটেজ পার্কসহ দেশের বিভিন্ন বিনোদন পার্কে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ দর্শনার্থী প্রবেশ করার নিয়ম মেনে খোলা হবে। পুরো বিষয় তদারকির জন্য বিএএপিএ একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। এই সেলের সদস্যরা বিভিন্ন পার্ক সরেজমিন পরিদর্শন করবেন।
রাজধানীর আশপাশে প্রায় কয়েক শ ছোট-বড় রিসোর্ট আছে। বড় রিসোর্টগুলো ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। অনেকে দিনব্যাপী প্যাকেজও ঘোষণা করেছে। আর এসব রিসোর্টের ফেসবুকে পেজে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে চলছে বুস্টিং।
গাজীপুরের ছুটি রিসোর্ট বেশ জনপ্রিয়। ছুটি রিসোর্টের ৫০ শতাংশ রুম অতিথিদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। অতিথির সংখ্যা বিবেচনা করে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ মূল্যছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। ছুটি রিসোর্টের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মো. তুহিন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকা দেওয়া আছে এমন অতিথিদের জন্য আমরা বিশেষ অফারের চিন্তাভাবনা করছি। এ ক্ষেত্রে এক রাত থাকলে আরেক রাত ফ্রি কিংবা ৫০ শতাংশ মূল্যছাড় দেওয়া হতে পারে।’
গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম দামে ফুল বোর্ড প্যাকেজ দিচ্ছে। দুজনের তিন বেলা খাবারসহ এক রাত থাকার জন্য ১১ হাজার টাকায় মিলছে এই অফার।
এ দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারসহ দেশের পর্যটন গন্তব্যে সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো দৈনিক ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে চায়। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা, নভোএয়ার প্রতিদিন ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা পথে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। যাত্রীদের চাপ আছে। এই বিষয়ে ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আরও ফ্লাইটের অনুমতি চাই। কারণ, বিদেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক সচ্ছল পরিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে চান।’
কক্সবাজার থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউসের প্রস্তুতি শেষ। পর্যটক টানতে হোটেলগুলো ৩০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষভাড়ায় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ, রেস্তোরাঁ মালিকদের সাতটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ছাড়ের কারণে বেশ সাড়াও মিলেছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে।
দেশি-বিদেশি পর্যটকের পছন্দের জায়গা টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের মারমেইড বিচ রিসোর্ট। এই রিসোর্টের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানান, তাঁরা কক্ষ ভাড়ায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
তারকা মানের হোটেল সি-গাল, সায়মান বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইস, কক্স-টুডে, লং বিচসহ বিভিন্ন হোটেলে কক্ষ ভাড়ায় ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বর্ষায় প্রকৃতির রূপ দেখতে পর্যটকেরা ছোটেন সিলেটে। সিলেট থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে আবারও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সিলেটের বিধ্বস্ত পর্যটন খাততে চাঙা করতে তাঁরা নতুনভাবে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কারের কাজ চলছে।
সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হলো গোয়াইনঘাটের জলাবন রাতারগুল, জল-পাথরের শয্যাখ্যাত বিছনাকান্দি, মায়াবী ঝরনা ও জাফলং; কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর এবং জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল। এর বাইরে চা-বাগান, হাকালুকি হাওর ছাড়াও অনেকে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে আসেন।
সিলেটের নাজিমগড় রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল এনাম বলেন, ‘রিসোর্ট খুলেছি কি না, এটি জানতে আগ্রহীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে এখনো কেউ আগাম বুকিং করেননি।’
সিলেটে প্রায় আড়াই শ হোটেল ও রিসোর্ট আছে। এ ছাড়া পর্যটনকেন্দ্রিক রেস্তোরাঁ ব্যবসাও আছে। করোনা পরিস্থিতিতে এসব ব্যবসায় ধস নেমেছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো, শোয়েব প্রথম আলোকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ীই বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন। এখন পর্যটনকেন্দ্রগুলো চালু করলে এই খাত দ্রুত চাঙা হবে।