সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের বদৌলতে কোভিড-১৯-এর ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের নীতিসহায়তার কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক যেমন রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অর্থ সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
২০২০-২১ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর (দ্বিতীয় প্রান্তিক) সময়ের অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় এসব কথা বলেছে এমসিসিআই। পর্যালোচনায় তারা বলেছে, সাধারণ ছুটি প্রত্যাহারের পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিকতা ফিরে পাচ্ছে। এমনকি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু তাদের চোখে সমস্যা হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান এখনো পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতায় কাজ করছে না। এ ছাড়া আরও অনেক খাত এখনো পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতা ফিরে পায়নি। সেগুলো হচ্ছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত, চামড়া, দেশীয় বাজারভিত্তিক ইস্পাত, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, যোগাযোগ ইত্যাদি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করার চেয়ে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টাই বেশি করছেন।
ঘুরে দাঁড়ানোর পথে থাকলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে আছে বলে মনে করে এমসিসিআই। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর গতি, বেকারত্ব, রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ধীর গতি—এগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া তারা আরও বলেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের গতিও ধীর। সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে এমসিসিআই। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রেখে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে এর বিকল্প নেই।
কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগের গতি বৃদ্ধি না পেলে কর্মসংস্থান সেভাবে বাড়বে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে এমসিসিআই। বেসরকারি বিনিয়োগ হার অনেক বছর ধরেই জিডিপির ২২-২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে এমসিসিআইয়ের পরামর্শ হলো, বাণিজ্যনীতি স্বাধীন করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নানা খাতে সংস্কার প্রয়োজন।
এদিকে বিশ্ব অর্থনীতি অনেক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও উন্নত দেশগুলোতে কোভিডের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার কারণে আবারও সংকোচনের মুখে পড়েছে। এতে বাংলাদেশও কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশ এই সাময়িক বিপত্তি কাটিয়ে উঠবে বলে মনে করছে এমসিসিআই। তবে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া আমদানির বিপরীতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিটকে যে অর্থ পরিশোধ করতে হবে, তাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বাড়তে পারে।