গাড়ির অগ্রিম কর দিয়েছেন তো? না দিয়ে থাকলে এখন অগ্রিম কর দিয়ে দিন। হয়তো ভাবছেন, প্রতিবার গাড়ির ফিটনেস নবায়নের সময় এই কর দেন। এখন কেন দেবেন? এখন দেবেন কারণ, ফিটনেস নবায়নের নিয়ম বদলে গেছে। আগে প্রতিবছর গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করাতে হতো। তখনই অগ্রিম কর কেটে রাখা হতো।
এখন দুই বছর পরপর ফিটনেস নবায়ন করাতে হয়। কিন্তু প্রতিবছরের করের হিসাব ওই বছরেই শেষ করতে হয়। গাড়ির অগ্রিম কর না দিলে এ বছর বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দেওয়ার সময় আটকে যাবেন আপনি। কর নথিতে সম্পদের বিবরণীতে গাড়ি দেখানো থাকবে, সেই গাড়ির জন্য অগ্রিম কর দেওয়া হয়নি।
গত মে মাসেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়ে দিয়েছে যে গাড়ির ফিটনেস নবায়ন দুই বছর পরপর হলেও অগ্রিম কর প্রতিবছরই দিতে হবে।
মনে রাখবেন, গাড়ির অগ্রিম করের টাকা ওই বছরই করের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। পরের বছরের জন্য জমিয়ে রাখা বা সমন্বয় করা যাবে না। এর মানে, গাড়ির অগ্রিম কর হলো চূড়ান্ত কর দায়।
বর্তমানে গাড়ির সিসিভেদে অগ্রিম করের পরিমাণ কমবেশি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে গাড়ির ওপর অগ্রিম কর বৃদ্ধি করা হয়। ১৫০০ সিসি পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ির অগ্রিম কর ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। বাংলাদেশে যত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার হয়, এর প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি ১৫০০ সিসির কম। ১৫০০ সিসির বেশি কিন্তু ২০০০ হাজার সিসির কম এমন গাড়ির অগ্রিম কর ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করা হয়। এ ছাড়া ২০০০ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির জন্য ১ লাখ টাকা এবং ৩০০০ সিসি থেকে ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম কর দিতে হবে। এর বেশি সিসি হলে দুই লাখ টাকা অগ্রিম কর দিতে হবে।
এখন ফিটনেস নবায়ন তো প্রতিবছর হয় না, তাহলে কখন গাড়ির অগ্রিম কর দেবেন। প্রতিবছর গাড়ির জন্য ট্যাক্স টোকেন নিতে হয়। এ জন্য ৫ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারিত কিছু ব্যাংকে জমা দিয়ে এই টোকেন নিতে হয়। এখন ট্যাক্স টোকেনের টাকা জমা দেওয়ার জন্য গাড়ির অগ্রিম কর দিয়ে ফেলতে হবে। এর মানে দাঁড়াল, আপনার যদি ১৫০০ সিসির কম যেমন, টয়োটা করোলা, এক্সিও, প্রবক্স, এলিয়ন প্রিমিওসহ নিশান, টাটা মিৎসুবিশি ব্র্যান্ডের গাড়ি থাকে, তাহলে প্রতিবছর আপনার খরচ হবে ৩০ হাজার ৮০২ টাকা। এখানেই শেষ নয়, আপনি যখন অগ্রিম কর দিতে যাবেন, তখন আগের বছরের রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও দেখাতে হবে। এই নতুন নিয়ম করা হয়েছে।
গাড়ির অগ্রিম কর প্রতিবছর দিতে হবে কি না, তা নিয়ে গাড়িওয়ালাদের মধ্যে ধোঁয়াশা কাটেনি। আবার অগ্রিম কর জমা নিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, রাজধানীর ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা রুবাইয়াত সাদী ব্যবসা করেন। ব্যবসার পাশাপাশি পরিবারের কাজে ব্যবহারে জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে সাদীর ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়, তখন তিনি ট্যাক্স টোকেনের টাকা জমা দিতে ব্যাংকে যান। দীর্ঘ সারি পেরিয়ে ঘণ্টাখানেক পর ব্যাংকের বুথে টাকা জমা দেবেন, তখন ব্যাংক কর্মকর্তা জানালেন, গাড়ির অগ্রিম করের টাকা জমা না করলে ট্যাক্স টোকেনের টাকা রাখা যাবে না। কিন্তু রুবাইয়াত সাদীর পকেটে তখন এত টাকা না থাকায় ওই দিন ফিরে আসতে হয়েছে। পরে আরেক দিন তিনি ট্যাক্স টোকেন ও অগ্রিম করের টাকা জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসের আগে যাঁরা ট্যাক্স টোকেনের টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁদের গাড়ির অগ্রিম করের টাকা জমা দিতে হয়নি। এখন আয়কর রিটার্ন জমার আগে তাঁদের অবশ্যই অগ্রিম কর জমা দিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একজন গাড়িওয়ালার বছরে করযোগ্য তিন লাখ টাকা আয় থাকবে না, এটা অস্বাভাবিক। তাই আগের বছরের রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ছাড়া গাড়ির অগ্রিম করের টাকা জমা দেওয়া যাবে না।