নিম্ন আয়ের যে ৩৫ লাখ পরিবারকে সরকার গত বছর নগদ আড়াই হাজার টাকা করে এককালীন দিয়েছিল এবারও তাঁরাই এ সহায়তা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী রোববার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
আগের ৩৫ লাখ পরিবারকেই নগদ সহায়তা দেওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা জানান, এর চেয়ে বেশি দরিদ্র লোকের কোনো তথ্যভান্ডার নেই সরকারের কাছে। গত বছর করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ১৫ লাখ পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছানো যায়নি যথাযথ তথ্যভান্ডারের অভাবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ কৃষককেও এককালীন ৫ হাজার টাকা করে নগদ দেওয়া হবে।
অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, আগামী ২ মে রোববার থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তার পরের সপ্তাহ থেকে দেওয়া হবে কৃষকদের।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, কোনদিন উদ্বোধন হবে তা অর্থ বিভাগ বলতে পারবে। তবে এটুকু বলতে পারি যে শিগগিরই এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।
নিম্ন আয়ের পরিবার ও কৃষকদের নগদ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে অর্থ বিভাগের তৈরি করা দুটি আলাদা সারসংক্ষেপ ও প্রস্তাব কয়েক দিন আগে অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দুটো সহায়তাই দেওয়া হবে মোবাইল সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগটি নতুন। ৪ এপ্রিল শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬টি জেলায় ফসলি জমি নষ্ট হওয়ার কারণে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৈরি তথ্যভান্ডার অনুযায়ী কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হবে। কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারের মোট ৯৩০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে নিম্ন আয়ের ৩৫ লাখ পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৮৮০ কোটি টাকা। বাকি ৫০ কোটি টাকা কৃষকদের জন্য। পুরো টাকাই দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মোবাইল নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে গরিব মানুষের তালিকা করার জন্য এক বছর যথেষ্ট সময়। দুঃখজনক যে কাজটি হয়নি। ফলে ৩৫ লাখের বেশি লোকের কাছে নগদ সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না সরকার।রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে আসে, কোভিড-১৯–এর কারণে গত এক বছরে দেশে নতুন করে গরিব হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। অথচ গতবারের তালিকা ধরেই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবারও।
গত বছর ৫০ লাখ পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তা থেকে ৮১১ কোটি টাকা পায় ৩৬ লাখ ৭ হাজার ৮৭২ পরিবার। পৌঁছানো যায়নি ১০১ কোটি টাকা। ফলে ৪৩৯ কোটি টাকা থেকে যায়, অর্থাৎ তা দিতেই পারেনি সরকার।
এদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এক চিঠিতে অর্থ বিভাগকে জানায়, সরকার দিলেও ৪ লাখ ২ হাজার ১৬৮টি পরিবারের কাছে কোনো টাকা পৌঁছায়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যাওয়া ১০১ কোটি ১৫ লাখ টাকা পড়ে আছে বিকাশ, নগদ, রকেট, শিউরক্যাশ—এই চার এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কাছে।
অর্থ বিতরণ শুরুর পর অর্থ বিভাগের কাছে ধরা পড়ে, টাকা পাওয়ার যোগ্য গরিবদের বদলে তালিকায় ঢুকে পড়েছেন তুলনামূলক সচ্ছল মানুষেরা। এরপর ১৪ লাখ ৩৩ হাজার জনকে বাদ দেয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ মে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নেওয়া এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর আগে দেশব্যাপী ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা তৈরি করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। অর্থ বিতরণ শুরু হওয়ার পর ধরা পড়ে তালিকাটি ত্রুটিপূর্ণ। টাকা পাওয়ার যোগ্য গরিবদের বদলে তালিকায় ঢুকে গেছেন তুলনামূলক সচ্ছল মানুষেরা। এরপর ১৪ লাখ ৩৩ হাজার জনকে বাদ দেয় সরকার।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিডের প্রথম ধাক্কার রেশ না কাটতেই এল দ্বিতীয় ধাক্কা। এক বছরে নতুন করে গরিব হলো অসংখ্য মানুষ। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মোবাইল নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে গরিব মানুষের তালিকা করার জন্য এক বছর যথেষ্ট সময়। দুঃখজনক যে কাজটি হয়নি। ফলে ৩৫ লাখের বেশি লোকের কাছে নগদ সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না সরকার।’