আগামী অর্থবছর থেকে সব কোম্পানিকে ভ্যাট রিটার্নের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিবেদনও জমা দিতে হবে। ৩ জুন ঘোষিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই পরিবর্তন এনেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানির এই ভ্যাটের আর্থিক প্রতিবেদন আয়কর বিভাগও ব্যবহার করতে পারবে।
এর ফলে বছরজুড়ে একটি কোম্পানি কী পরিমাণ পণ্য বা সেবা বেচাকেনা করল, সেই বেচাকেনার বিপরীতে কত আয় ও মুনাফা করল—এর প্রকৃত চিত্র যাচাই–বাছাই করতে পারবেন আয়কর কর্মকর্তারা। ফলে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে কর বা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া কমে যাবে বলে আশা এনবিআরের।
কোনো কোম্পানি কর ফাঁকি দিচ্ছে কি না, তা ধরতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে আয়কর বিভাগ। বর্তমানে একটি কোম্পানিকে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমার পাশাপাশি নিরীক্ষা প্রতিবেদনও জমা দিতে হয়। এই প্রতিবেদন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের মাধ্যমে তৈরি করাতে হয়। সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদনের কপি দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) ওয়েবসাইটে জমা রাখতে হয়।
সেখানে জমা রাখার সঙ্গে সঙ্গে একটি ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন কোড (ডিভিসি) আসবে। ওই কোম্পানি যখন ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে জমা দেবে, তখন কোডটি লিখতে হবে। ফলে আয়কর কর্মকর্তা সহজেই ধরতে পারবেন ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি সঠিক কি না। গত ডিসেম্বর মাসে ডিভিসি ব্যবস্থা চালু করা হয়।
আবার কোম্পানির সারা বছরের বেচাকেনার হিসাবও মিলবে ভ্যাট রিটার্নের সময়ে দেওয়া আর্থিক বিবরণী দিয়ে। কোনো আয়কর কর্মকর্তার যদি সন্দেহ হয়, ওই কোম্পানি বিক্রি কম দেখিয়ে আয় কম দেখাচ্ছে। তাহলে ওই আয়কর কর্মকর্তা চাইলে ভ্যাট অফিস থেকে ওই আর্থিক বিবরণী সংগ্রহ করতে পারবেন। তারপর ডিভিসির মাধ্যমে পাওয়া নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের সঙ্গে ভ্যাট অফিসে দেওয়া আর্থিক প্রতিবেদন মিলিয়ে দেখতে পারবেন।
এনবিআরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, একটি কোম্পানি যেন আয়কর, ভ্যাট বিভাগে একই তথ্য ব্যবহার করে, সে জন্য আয়কর ও ভ্যাট বিভাগের মধ্যে কাজের সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে। কর ফাঁকি কমবে।
জানা গেছে, বর্তমানে ৭৮ হাজার কোম্পানির কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) আছে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান বার্ষিক রিটার্ন দেয়। আর আইসিএবি সদস্যরা প্রতিবছর ১৫ থেকে ১৬ হাজার নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেন। আয়কর বিবরণী জমার সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের এসব গরমিল এবার যাচাই–বাছাই করা হবে।
বর্তমানে আড়াই লাখ প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় শনাক্তকরণ (বিআইএন) বা ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। মাত্র ১ লাখ ১২ হাজার প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে অনলাইনে রিটার্ন দেয়। ভ্যাটের টাকাও পরিশোধ করে অনলাইনে। বাকি ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান এখনো সনাতনী পদ্ধতিতে কাগুজে রিটার্ন দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে প্রতিবছর আর্থিক বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।