সরকারি প্রকল্প

কাজেই আসছে না তিন মার্কেট

ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতার কারণে দু’টি মার্কেট ৮ মাস ও আরেকটি দুই বছর ধরে চালু হচ্ছে না।

যশোরের ঝিকরগাছায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক ফুল মার্কেটটি নির্মাণের আট মাস পার হলেও এখনো চালু হয়নি
ছবি: মনিরুল ইসলাম

যশোরে প্রান্তিক চাষি ও ব্যবসায়ীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত তিনটি মার্কেট চালু হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও জমির মালিকানা নিয়ে আইনগত জটিলতার কারণে দুটি মার্কেট আট মাস ও আরেকটি দুই বছর ধরে উদ্বোধন করা যাচ্ছে না। স্থানীয় ফুলচাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দ্রুত মার্কেট তিনটি চালুর দাবি জানিয়েছেন।

মার্কেট তিনটি হলো আধুনিক ফুল মার্কেট, আধুনিক মাছের পোনা বিক্রয়কেন্দ্র ও বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী মার্কেট। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থে মার্কেটগুলো তৈরি করা হয়েছে।

আধুনিক পোনা বিক্রয়কেন্দ্র

যশোর শহরের চাঁচড়া এলাকায় ৮০ শতক জমির ওপর ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক মাছের পোনা বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। দোতলা এই বিক্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মৎস্য বিভাগের কাছে তা হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পোনা বিক্রয়কেন্দ্রটির নিচতলার ১১ হাজার বর্গফুট জায়গায় কার্পজাতীয় মাছের পোনা বিক্রির জন্য ৩২০ বর্গফুটের ৫১টি সিস্টার্ন (হাউস) নির্মাণ করা হয়েছে। সিস্টার্নে পানি শাওয়ারিং ও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। আর দেশি প্রজাতির ছোট মাছের পোনা বিক্রির জন্য দোতলায় ৭ হাজার ৯০০ বর্গফুট জায়গা রয়েছে। সেখানে ৭০ জন ব্যবসায়ী বড় হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে পোনা বিক্রি করতে পারবেন। মাছের গাড়ি সরাসরি দোতলায় নেওয়ার জন্য র‌্যাম্প পদ্ধতির সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য স্বয়ংক্রিয় জেনারেটরও স্থাপন করা আছে।

কিন্তু আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত পোনা বিক্রেতারা এই কেন্দ্রে জায়গা বরাদ্দ নিতে আগ্রহ দেখাননি। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, চাঁচড়া বাবলাতলায় রাস্তার ওপর পাতিলে মাছের পোনা রেখে বিক্রি করতে কোনো খরচ নেই। কিন্তু পোনা বিক্রয়কেন্দ্রে জায়গা বরাদ্দ নিতে অফেরতযোগ্য ২৫ হাজার টাকা জামানাত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে আরও অন্তত এক হাজার টাকা খরচ হবে। তাই তাঁরা ওই কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হননি।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘অফেরতযোগ্য জামানাতের কারণে এত দিন পোনা ব্যবসায়ীরা বিক্রয়কেন্দ্রে জায়গা বরাদ্দ নিতে আগ্রহী হননি। তবে ইতিমধ্যে সব জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। ভবনটি পড়ে থেকে কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছিল। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। আশা করছি, এক মাসের মধ্যে মার্কেটটি উদ্বোধন করা যাবে।’

বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী মার্কেট

গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে যশোরের কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা বাজারে সরকারি খাসজমিতে প্রায় ৩ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। আট মাস ধরে মার্কেটটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের ৩০ মে এই মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ৭২ বর্গমিটারের দোতলা এই দৃষ্টিনন্দন মার্কেটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। অথচ মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর খোলা জায়গায় পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে খুবই দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে তাঁরা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃপক্ষ চলতি অর্থবছরে মার্কেটটি বুঝে দিয়েছে। দোকানঘর বরাদ্দ নিতে আগ্রহীদের আবেদন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। দু-এক মাসের মধ্যে মার্কেটটি চালু করতে পারব বলে আশা করছি।’

আরাফাত হোসেন আরও বলেন, ‘ওই মার্কেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ শতাংশ জায়গা বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। মার্কেটটি ব্যবস্থাপনার জন্য একটা ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণ খরচের পর অবশিষ্ট টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করতে হবে।’

গদখালির ফুল মার্কেট

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি এলাকায় উৎপাদিত ফুল ও ফুলের বীজ বিপণন ও সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হিমাগারসহ আধুনিক ফুল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে এক একর জমিতে এই মার্কেট নির্মাণের পর আট মাস পেরিয়ে গেলেও চালু করা হয়নি।

এদিকে বীজ সংরক্ষণ করতে না পারায় স্থানীয় ফুলচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের এখন চড়া মূল্যে যশোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার আলুর হিমাগারে ফুলের বীজ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। তা-ও আবার অনেক সময় হিমাগারে জায়গা পাওয়া যায় না।

এদিকে মার্কেটের জমির মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতা ও আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা না থাকায় জেলা প্রশাসক মার্কেটটি বুঝে নিতে পারছে না।

যোগাযোগ করা হলে যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তমিজুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমির দানপত্রসংক্রান্ত বিষয়ে জমিদাতাদের অনুকূলে এমন কিছু শর্ত রয়েছে যে ওই মার্কেটের মালিকানা একসময় জমিদাতাদের হয়ে যাবে। শর্তগুলো সংশোধনের জন্য ইউএনওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই মার্কেটটি চালু করতে পারব।’