গত জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ডলার করে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। তবে ঈদের আগে চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ১২ কোটি ডলার করে। ঈদের আগে আগে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসা গত মাসের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোরবানির ঈদের কারণে অনেকে বিদেশ থেকে কোরবানির জন্য প্রিয়জনদের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছেন। আবার বিভিন্ন দাতা সংস্থাও কোরবানির জন্য অর্থ পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য বিদেশ থেকে ভালো সহায়তা আসছে। সব মিলিয়ে তাই বিদেশ থেকে অর্থ আসার প্রবাহ বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, জুলাই মাসের প্রথম ছয় দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ৭৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর জুন মাসের পুরো সময়ে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার।
ব্যাংকাররা বলছেন, ঈদের আগে আয় ধরতে ব্যাংকগুলো ডলারের বেশি দাম দিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১০১-১০২ টাকা দিয়েও প্রবাসী আয় আনছে। ফলে খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকে ডলারের দামের পার্থক্য কমে আসছে। এ কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গেছে।
আগে ব্যাংকগুলো বৈধ পথে প্রবাসী আয় এলে প্রতি ডলার ৯৪-৯৫ টাকা দাম দিত। আর হুন্ডিতে পাঠালে পাওয়া যেত ১০০ টাকার বেশি। এ কারণে বৈধ পথে আয় আসা কমে গিয়েছিল।
তবে প্রণোদনা ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পরও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন হয়। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার আয় পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈধ পথে আয় আনলে ব্যাংক দিচ্ছে ৯৪-৯৫ টাকা। আর হুন্ডিতে পাঠালে মিলছে ১০০ টাকা। পাশাপাশি হুন্ডিতে আসা আয় একদম ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। এ কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের পতন হয়েছে। অবশ্য ব্যাংকের মাধ্যমে আয় পাঠালে তার সঙ্গে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা যুক্ত হচ্ছে। তবে বিদেশ থেকে আয় পাঠাতে ৩ থেকে ৪ শতাংশ অর্থ খরচ হয়। তাই অর্থ পাঠাতে অবৈধ পথ বেছে নিয়েছেন অনেক প্রবাসী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। এ আয় আগের মাসের চেয়ে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার কম। চলতি বছরের মে মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। এ আয় আগের অর্থবছরের (২০১৯–২০) চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি ।
এদিকে ডলার–সংকট কাটাতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধারাবাহিকভাবে কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এই দামে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় আনছে আরও বেশি দামে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।