ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হিসাব দিয়ে জানিয়েছে, তার নিজের ব্র্যান্ড মূল্য ৪২৩ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর একই ধরনের ব্যবসায়ের মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ইভ্যালির ন্যূনতম ব্র্যান্ড মূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা হয়। কম করে হিসাব করে ব্র্যান্ড মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু ব্যয়ের সমপরিমাণ অংশ বিবেচনা করা হয়েছে।
ইভ্যালি আরও জানিয়েছে, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল কোম্পানিকে দিয়েছেন। বাকি ৫৪৩ কোটি টাকা হচ্ছে কোম্পানিটির চলতি দায়।
ইভ্যালি জানিয়েছে, দায়ের বিপরীতে তাদের চলতি সম্পদ রয়েছে ৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর সম্পত্তি, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি মিলিয়ে রয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ দুটির যোগফল মোট ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এগুলো হচ্ছে এগুলোর স্থাবর সম্পত্তি।
মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা থেকে এই অঙ্ক বাদ দিলে বাকি থাকে ৪৩৯ কোটি টাকা, যাকে ইভ্যালি বলছে তার অস্থাবর সম্পত্তি। বিবরণী মেলাতে ইভ্যালি দেখিয়েছে অস্থাবর সম্পত্তি ৪৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ৪২৩ কোটি টাকা হচ্ছে তার ব্র্যান্ড মূল্য, আর ১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা হচ্ছে অদৃশ্যমান সম্পত্তি।
ইভ্যালি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রাথমিকভাবে এই সম্পদ ও দায়ের হিসাব তৈরি করা হয়েছে। কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের হিসাব যথাযথভাবে উপস্থাপনের জন্য সময় চেয়ে ৩১ জুলাই চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছিল, তৃতীয় নিরপেক্ষ নিরীক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে এ হিসাব দেওয়া হবে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আজ রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইভ্যালির কাছ থেকে এক দফার জবাব আমরা পেয়েছি। আরও দুই দফার জবাব আসবে। এরপর আমরা বসে পরের করণীয় ঠিক করব।’
বাকি দুই দফার জবাবের মধ্যে রয়েছে কোম্পানিটিকে গ্রাহকদের কাছে মোট দেনার পরিমাণ জানাতে হবে ২৬ আগস্টের মধ্যে। আর মার্চেন্টদের কাছে দায় এবং গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায় পরিশোধের সময়বদ্ধ পরিকল্পনা জানাতে হবে ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
নিজের ব্র্যান্ড মূল্য সম্পর্কে ইভ্যালি বলেছে, ব্র্যান্ড মূল্য ৪২৩ কোটি টাকা হচ্ছে ইকমার্স অংশের। এ ছাড়া বেশ কিছু সফল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন-ইফুড, ইজবস, ইবাজার, ইহেলথ, ফ্লাইট এক্সপার্ট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা কোম্পানির সার্বিক ব্র্যান্ড মূল্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ইভ্যালি জানিয়েছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম, সরবরাহকারীদের কাছে দেনা, ব্যবসায়িক ব্যয়সংক্রান্ত দেনাসহ অন্যান্য সব দেনা বাবদ মোট চলতি দায় ৫৪৩ কোটি টাকা। গত এক মাসেই দুই লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৮টি পুরোনো ক্রয় আদেশ (অর্ডার) সফলভাবে সরবরাহ করা হয়েছে, যা ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (ইক্যাব) জানানো হয়েছে।
২২ আগস্ট রোববার থেকে ইভ্যালির অফিস স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পূর্ণ আকারে চালু করে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, গ্রাহকদের পুরোনো ক্রয় আদেশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ এবং সরবরাহকারীদের দেনা পরিশোধের সুবিধার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন মাসে ইভ্যালির ওপর এক প্রতিবেদন তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়, প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও আছে ৬৫ কোটি টাকার সম্পদ।
ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল আজ রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্র্যান্ড মূল্য যা হওয়ার কথা রক্ষণশীলভাবে হিসাব করে আমরা তার চেয়েও কম দেখিয়েছি। আশা করছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ব্র্যান্ড মূল্য নির্ধারণের চর্চাটি আমলে নেবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, একশ্রেণির গ্রাহক পণ্য পাচ্ছেন না, আবার মার্চেন্টরা পণ্য সরবরাহ করেও পাচ্ছেন না তাদের পাওনা টাকা। ইকমার্স খাতের স্বার্থেই আগে তাদের পাওনা পরিশোধ দরকার। ইভ্যালি এভাবে নিজের ব্র্যান্ড মূল্য নির্ধারণ করলে বঞ্চিত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের তাতে লাভ কি?