আফগানিস্তানের রাজস্ব বিভাগের অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা

এহতেশামুল হক, সাবেক উপদেষ্টা, আফগানিস্তান শুল্ক খাত সংস্কার প্রকল্প  
এহতেশামুল হক, সাবেক উপদেষ্টা, আফগানিস্তান শুল্ক খাত সংস্কার প্রকল্প  

আফগানিস্তানে রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা এখনো বেশ দুর্বল। এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশটির রাজস্ব খাতে সংস্কার কর্মসূচি চলছে। সেই কর্মসূচিতে বাংলাদেশি হিসেবে আমারও কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আফগানিস্তানে এমনিতেই রাজস্ব আদায় হয় খুব কম, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১-২ শতাংশ হবে। এখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে তা আরও কমে যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথ হয়ে যাবে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। দেশটির রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে প্রতিটি দেশকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে।  

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আফগানিস্তানের রাজস্ব খাত সংস্কার প্রকল্পে আন্তর্জাতিক কাস্টমসবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করি। আমার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দেশটির রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। সে সময়ে আফগানিস্তানের রাজস্ব খাতের অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ করেছি। আফগানিস্তানের রাজস্ব বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে একজন চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়। চারজন পরিচালকের মধ্যে তিনজনের রাজস্ব খাত বিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই। কোনো নিয়োগনীতি নেই। আবার ২০১৪ সালের দিকে আফগানিস্তানের ইউএসএইডে শুল্ক-করবিষয়ক দোভাষী (ইন্টারপ্রেটর) কাজ করতেন সাইদুর রহমান নামের একজন আফগান। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কথোপকথনে সহায়তা করতেন তিনি। তিন বছর পর আফগানিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা সাইদুর রহমানকেই রাজস্ব বিভাগের মহাপরিচালক বানিয়ে দেন।
আফগানিস্তান পুরোপুরি আমদানিনির্ভর দেশ। শুল্ক-কর আদায় বেশি হওয়ার কথা।

কিন্তু নিয়মনীতির বালাই নেই। শুল্ক বিভাগ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। পণ্যবাহী ট্রাকচালকেরা যদি ‘মন্ত্রী’ বা ‘মহাপরিচালক’ কিংবা ‘পরিচালক’ অথবা প্রভাবশালীদের পরিচয় দিতেন, তাহলে শুল্ক-কর দিতে হতো না। মার্কিন সেনাবাহিনী অনেকটা পুলিশের ভূমিকা পালন করত। তাদের কাছে ধরা না পড়লে আমদানিকারকেরা পার পেয়ে যেতেন।

আফগানিস্তানের শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের সিংহভাগই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁদের অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ-কড়ির মালিক হয়েছেন। এমন কর্মকর্তাও দেখেছি, সকালের ফ্লাইটে দুবাই যেতেন, বিকেলের ফ্লাইটে চলে আসতেন। রাজস্ব বিভাগে নিয়মকানুনের বালাই ছিল না। সব জায়গায় স্বজনপ্রীতি। নিয়োগনীতি নেই।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজস্ব খাত সংস্কার চলেছে, কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। কারণ, আফগান শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক ব্যবস্থা তৈরি—এসব বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই। এমনকি এই রাজস্ব খাত কর্মসূচির আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়তি বেতন-ভাতা দেওয়া হতো। সরকারি কর্মকর্তাদের এভাবে অর্থকড়ি দেওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা আফগানিস্তানে ঘটেছে। সার্বিকভাবে কোটি কোটি ডলার খরচ করেও আফগানিস্তানের রাজস্ব খাতের সংস্কার সম্ভব হয়নি। অনুলিখন: জাহাঙ্গীর শাহ্।