আন্দামানে ১২০ কোটি টাকার বাংলাদেশি পণ্যবোঝাই জাহাজডুবি নিয়ে রহস্য

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ভিয়েতনাম থেকে চট্টগ্রামে আসার পথে মিয়ানমারের উপকূলের অদূরে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পণ্যবাহী একটি জাহাজ ডুবে যাওয়া নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সব নাবিক নেমে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও জাহাজটির মালিকপক্ষ জাহাজডুবি বা সঠিক অবস্থানের কোনো ঘোষণা না দেওয়ায় আমদানিকারকেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

জাহাজটির নাম এমভি তান বিন ১২৭। এতে ১১ হাজার মেট্রিক টন ইস্পাতের রোল রয়েছে। এসব রোলের বাজারমূল্য ১২০ কোটি টাকা। পানামার পতাকাবাহী ২০ বছর বয়সী ছোট আকারের জাহাজটি লম্বায় ১৩০ মিটার।

জাহাজটি সম্পর্কে প্রথম তথ্য প্রকাশ করে মিয়ানমারের নৌ প্রশাসন। গত ৩ আগস্ট মিয়ানমারের নৌ প্রশাসন এক নোটিশে জানায়, ১ আগস্ট মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৯০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন জাহাজের মাস্টার।

জাহাজটিতে ৫১৯ মেট্রিক টন ইস্পাতের কয়েল আমদানি করেছেন কেরানীগঞ্জের তন্ময় মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের রতন কুমার বণিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিপিং এজেন্ট থেকে জাহাজটি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের দিচ্ছে না। একেকবার একেক রকম নাটকীয় তথ্য দিচ্ছে। জাহাজটি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। অথচ জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাবিকেরা নেমে গেছেন। এখন জাহাজ ডুবে গেলে যদি ঘোষণা না দেয়, তাহলে বিমা দাবি করারও সুযোগ পাচ্ছি না। এমনিতেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’

জাহাজটি সম্পর্কে প্রথম তথ্য প্রকাশ করে মিয়ানমারের নৌ প্রশাসন। গত ৩ আগস্ট মিয়ানমারের নৌ প্রশাসন এক নোটিশে জানায়, ১ আগস্ট মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৯০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন জাহাজের মাস্টার। পরিত্যক্ত জাহাজের ১৮ জন নাবিককে ‘এমসিসি চিটাগাং’ নামের একটি কনটেইনার জাহাজের নাবিকেরা উদ্ধার করেন।

সময়সূচি অনুযায়ী, জাহাজটি ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পৌঁছানোর কথা ছিল। নিয়মানুযায়ী এর আগে কাস্টম হাউসে জাহাজে আনা আমদানি পণ্য শুল্কায়নের জন্য নথিপত্র জমা দিয়েছেন আমদানিকারকেরা।

গ্রিসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেরিন ট্রাফিক জাহাজের চলাচলের গতিপথ তাৎক্ষণিক তথ্য প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, দুর্ঘটনার আগের দিন জাহাজটি আন্দামান সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত মালাক্কা প্রণালিতে অবস্থান করছিল। এর পর থেকে জাহাজটির স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

জাহাজটি নিয়ে এমন তথ্য প্রকাশিত হলেও জাহাজটির মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণা না দেওয়ায় রহস্য তৈরি হয়েছে। পানামা পতাকাবাহী জাহাজটির বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিনিধি হক অ্যান্ড সন্স শিপিং লাইন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মতিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাজটি পরিচালনাকারী কোম্পানি থেকে আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।’

সময়সূচি অনুযায়ী, জাহাজটি ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পৌঁছানোর কথা ছিল। নিয়মানুযায়ী এর আগে কাস্টম হাউসে জাহাজে আনা আমদানি পণ্য শুল্কায়নের জন্য নথিপত্র জমা দিয়েছেন আমদানিকারকেরা। কয়েকজন আমদানিকারকের আমদানি পণ্য শুল্কায়নও হয়েছে।

জাহাজডুবির ঘোষণা না দেওয়ায় বিমা দাবিও করা যাচ্ছে না। জাহাজটি ডুবেছে কি না, তা জাহাজ মালিকপক্ষের প্রতিনিধি শিপিং এজেন্টও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন না।
আমীর হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন

ঢাকার হাজীবাগের সুজন এন্টারপ্রাইজও এ জাহাজে করে ইস্পাতের পাত আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পণ্য আমদানিবাবদ রপ্তানিকারক দেশ কোরিয়ার ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমদানি মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। পণ্য হাতে না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
জাহাজে আমদানি পণ্য ইস্পাত প্রক্রিয়াকরণ করে ভবন ও স্থাপনার নানা কাঠামো তৈরি হয় দেশে। কাঁচামাল না পেয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছে জাহাজে পণ্য আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমীর হোসেন নুর আলী প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজডুবির ঘোষণা না দেওয়ায় বিমা দাবিও করা যাচ্ছে না। জাহাজটি ডুবেছে কি না, তা জাহাজ মালিকপক্ষের প্রতিনিধি শিপিং এজেন্টও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন না।