নতুন এডিপির আকার ২,২৫,৩২৪ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু পাচ্ছে ৩,৫০০ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ১৭,৩০৬ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি শুরু থেকে দেখভাল করে আসছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সোয়া লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নতুন দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। যেহেতু বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক নেই, সে জন্য প্রকল্পটি এক খাত থেকে আরেক খাতে নিতে যাচ্ছে সরকার।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তবে এই প্রকল্পের বরাদ্দ দেখানো হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে।
পরিকল্পনা কমিশনের গতকাল রোববারের বর্ধিত সভায় প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সভায় আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির প্রস্তাবও চূড়ান্ত করা হয়। ১৮ মে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এডিপিসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্ব স্থানান্তরের বিষয়গুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের কথা রয়েছে। সাধারণত পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এনইসিতে অনুমোদন হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে থাকেন।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। সে জন্য আমরা প্রকল্পটির দায়িত্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে দিতে যাচ্ছি। প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরব। তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
পরিকল্পনা কমিশনের গতকালের সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী এনইসি সভায় এ প্রস্তাব চূড়ান্ত হতে পারে
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার। আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির যে প্রস্তাব গতকাল পরিকল্পনা কমিশনের সভায় চূড়ান্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বা মোট এডিপির ৬১ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ মিলবে ৮৮ হাজার ২৫ কোটি টাকার। নতুন এডিপির প্রস্তাবটি আগামী এনইসির সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপির পরিমাণ ২০ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বেশি।
আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। গতকালের পরিকল্পনা কমিশনের সভায় স্বাস্থ্য খাতের এ বরাদ্দ প্রস্তাবও চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছর ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। যদিও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে টাকা দিলেও তারা সেই টাকা খরচ করতে পারে না। তাই টাকা দিয়েও সুফল মিলছে না। বছর শেষে টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু করতে চায় সরকার। ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা সেতুর বিপরীতে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আর একই সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে একক প্রকল্প হিসেবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে চায় সরকার। তাই আসছে বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্পটি। যার পরিমাণ ৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা এবং পায়রা বন্দর বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মোট ১ হাজার ৫১৫টি নতুন প্রকল্প যুক্ত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৩০৮টি। কারিগরি সহায়তার প্রকল্প ১১৮টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এমন প্রকল্প ৮৯টি। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বা পিপিপিতে ৮৮টি প্রকল্প রাখা হচ্ছে। যদিও গত কয়েক বছরে এডিপিতে পিপিপি খাতে প্রকল্প রাখা হলেও কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ৬৭৮টি প্রকল্প রাখা হয়েছে, যেসব প্রকল্প আগামী অর্থবছরের মধ্যেই শেষ করতে হবে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এ খাতের জন্য ৬১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এই খাতে ৪৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলে যাওয়ায় এই খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে গৃহায়ণ খাতে, ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এরপর চতুর্থ অবস্থানে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম সচিব ছায়েদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত এক দশকে অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
নতুন নতুন অনেক খাত যুক্ত হয়েছে। যেমন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা)। বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দিতে হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে বেশ কিছু খাতে সমন্বয় করা হয়েছে।