দেশে মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমেই চলেছে। সংকট মোকাবিলায় গত মাসে মার্কিন ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকায় নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আমদানি খরচ আরও বেড়ে মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে।
তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২২৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা প্রায় চার বছরের (৪৬ মাস) মধ্যে সর্বোচ্চ, আর এযাবৎকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো এখন বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১১৮ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত দরে প্রবাসী আয় কিনছে। এদিকে পণ্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয় হিসেবে আসা ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানির খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে যখন প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি চলছে, তখন আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকায় তা মানুষকে আরও চাপে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ২ হাজার ১৩৭ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ১ হাজার ৯৪১ কোটি ডলারের চেয়ে ১৯৬ কোটি ডলার, যা ১০ শতাংশ বেশি। সেবার পুরো অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। এক মাস বাকি থাকতেই আগের অর্থবছরের প্রায় সমান প্রবাসী আয় এসেছে এবার। গত এপ্রিলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২০৪ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ১৬৯ কোটি ডলার। সাধারণত প্রতিবছর ঈদের আগে প্রবাসী আয় বেড়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গত ২৯ মে ১৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগের মাস এপ্রিলে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত ডিসেম্বরের শেষে ছিল ২১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে। বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরও বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে।
ব্যাংকাররা মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে অর্থ পাচার ও হুন্ডি রোধে বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করে শুধু ডলারের দাম বাড়ানো হলে তাতে আমদানি ব্যয় বাড়বে, যা সাধারণ মানুষকে আরও চাপে ফেলবে। এ ছাড়া রপ্তানি আয়ও সময়মতো দেশে আনার বিষয়ে উদ্যোগ থাকা দরকার।