মার্কিন ডলারের তেজ কমার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ইয়েন, ইউরোসহ ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলার সূচকের মান ছিল ১০৪ দশমিক ৩০, যা বুধবার ছিল ১০৪ দশমিক ৫৭। সর্বশেষ ডলার সূচকের মান এত বেশি ছিল গত ৩০ জুলাই।
রয়টার্স জানিয়েছে, মূলত দুই কারণে ডলার ইনডেক্সের মান এতটা ওপরে রয়েছে। প্রথমত মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ধারনার চেয়ে কম গতিতে সুদের হার কমাবে, বাজারে এমন প্রত্যাশা তৈরি হওয়া এবং দ্বিতীয়ত ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন এমন আশাবাদ তৈরি হওয়া।
সিএমই গ্রুপের ফেডওয়াচ টুলের মতে, সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু জোরালো সূচক ও ফেড কর্মকর্তাদের কিছু আক্রমণাত্মক বক্তব্যের পর চলতি বছরের বাকি সময়ে মুদ্রানীতি আরও শিথিল করার সম্ভাবনা কমে গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ফেডের বাকি দুই বৈঠকে সুদের হার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা গতকালের ৭০ শতাংশ থেকে কমে ৬৬ শতাংশ হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এই সম্ভাবনা ছিল ৮৬ শতাংশ।
এই সপ্তাহে কানসাস ফেডের প্রেসিডেন্ট জেফরি স্মিড বলেন, তিনি ‘বড় ধরনের পদক্ষেপ এড়ানোর’ পক্ষপাতি। অন্যদিকে ফিলাডেলফিয়া ফেডের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক হারকার সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি ‘ধীর ও সুশৃঙ্খল’ পদক্ষেপকে সমর্থন করেন।
এসব বক্ত্যবের পর ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বিল থেকে পাওয়া মুনাফার হার তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ২৬ শতাংশে উঠেছে।
মিজুহো সিকিউরিটিজের জাপান ডেস্কের প্রধান শোকি ওমরি বলেন, প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে ফেড নীতি সুদের হার বেশি রাখবে, এমন আশাবাদ এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পণ্যমূল্য নিয়ে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেসব কারণে মার্কিন ডলার এখন মুদ্রার রাজা।
বাজারে এমন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে এমন পদক্ষেপ নেবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। আমদানি শুল্ক বাড়ানো হবে, ট্রাম্পের এমন ঘোষণা থেকে এই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ফলে ডলারের দাম বেড়েছে।
জনমত জরিপে যদিও দেখা গেছে, আগামী মাসের নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে, তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়ার প্রতিষ্ঠান পলিমার্কেট মনে করছে, ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা বেড়েছে। এই প্রত্যাশা মুদ্রাবাজারে দামের ওঠানামা আরও জোরালো করেছে।
কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার কারেন্সি স্ট্র্যাটিজিস্ট ক্যারল কং বলেন, ট্রাম্প জিতবেন, এমন একটি সম্ভাবনা বর্তমানে আর্থিক বাজারে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের ফলাফল এখনো অনিশ্চিত।