বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ দক্ষিণ এশিয়ায় সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। পরিবেশবান্ধব শক্তির ওপরে জোর দেওয়া ও কোম্পানিটির জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক ব্যবসা বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে এই বিনিয়োগ করা হবে বলে সামিটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার আওতায় ১ হাজার মেগাওয়াট সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলবে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশে সামিট গ্রুপের যত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোর হোল্ডিং কোম্পানি হলো সিঙ্গাপুরভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান। এতে জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার ২২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।
নিজের দপ্তরে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় বড় ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। বাংলাদেশের জন্য এটাই হবে সবচেয়ে কম দামের বিদ্যুৎ। এমনকি প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে উৎপাদন করা বিদ্যুতের চেয়েও এই বিদ্যুৎ সস্তা হবে।’
সামিট ১২টিরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করে। এ ছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে যে দুটি ভাসমান স্টোরেজ ও তরলকে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার ইউনিট রয়েছে, তার একটির মালিক এই প্রতিষ্ঠান।
সামিট ভুটান ও নেপালে ৭০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জলবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে বলেও জানান মুহাম্মদ আজিজ খান।
তিনি বলেন, বিশ্বে এলএনজির দাম এখনো খুব বেশি, ফলে বাংলাদেশে প্রধান প্রধান খাতের চাহিদা পূরণে তা সমস্যা তৈরি করছে। আর এ কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ঘটাচ্ছে।
এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এলএনজি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। এ সময় লাখ লাখ মানুষ প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় এসেছে। দেশটিতে গ্যাসের স্থানীয় মজুত কমে আসছে। ফলে গত দশকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশে দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এলএনজি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর এলএনজির মূল্য বেশ বেড়ে যায়। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়া ও স্থানীয় মুদ্রার দরপতনের কারণে জ্বালানি আমদানিতে সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ। ঠিক একই সঙ্গে আবহাওয়ার খেয়ালি আচরণের কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরে বাংলাদেশে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বিদ্যুৎ–ঘাটতি দেখা দেয়।
মুহাম্মদ আজিজ খান আশা করছেন যে নতুন সরবরাহ আসার কারণে এলএনজির দাম কমে আসবে। তাঁর প্রত্যাশা, সামিটের দ্বিতীয় ভাসমান স্টোরেজ ও তরলকে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার ইউনিট ২০২৬ সালের এপ্রিলে চালু করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করছি যে শীতের পর গ্যাসের দাম কমে যাবে।’