গরম থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই ঝুঁকছেন এসির দিকে। তবে এসি ব্যবহারে বেশ কিছু সতর্কতা জরুরি। তা না হলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি যেমন ন্যানো ফিল্টার, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ফিচার ইত্যাদি সমৃদ্ধ এসির ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপযোগী? এসব বিষয়েই প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন হায়ার বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অব প্রোডাক্ট (এয়ার কন্ডিশনার) মুহাম্মাদ মুনীম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক মাহমুদ নিজামী
‘স্বাস্থ্যসম্মত এসি’ বলতে আসলে কী বোঝায়? কত তাপমাত্রায় এসি ব্যবহার করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে না?
মুহাম্মাদ মুনীম: সত্যি বলতে, এসি স্বাস্থ্যসম্মত হবে কি না, সেটা নির্ভর করে এর ব্যবহারকারীর ওপর। কত তাপমাত্রায় এসি ব্যবহার করবেন, কতক্ষণ ব্যবহার করবেন—এটা নির্ভর করে বাইরের তাপমাত্রার ওপর। ডেল্টা-টি অনুসারে বাইরের তাপমাত্রা থেকে ঘরে এসির তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি কমিয়ে রাখাই শ্রেয়। না হলে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
দীর্ঘক্ষণ এসি চালালে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়। এর কারণ এবং প্রতিকার কী বলে মনে করেন?
মুহাম্মাদ মুনীম: এসি সাধারণত প্রতি ঘণ্টায় ঘরের দুই লিটার পানি টেনে নেয়, যেটাকে বলে ময়েশ্চার রিমুভাল ক্যাপাসিটি। আর বাংলাদেশের পরিবেশে আর্দ্রতা তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই যখন এসি আর্দ্রতা টেনে নেয়, তখন এসি রুমে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। বাইরের আর্দ্রতার সঙ্গে ঘরের ভেতরের আর্দ্রতার পার্থক্য থাকায় অনেকের কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। এর প্রতিকার হিসেবে তিনটি দিকে লক্ষ রাখা জরুরি—এসির তাপমাত্রা কমফোর্টের মধ্যে রাখা মানে অতিরিক্ত না কমানো, দীর্ঘ সময় একটানা এসির মধ্যে না থাকা এবং আধুনিক ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি ব্যবহার করা।
বয়সভেদে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণত কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি?
মুহাম্মাদ মুনীম: বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটি মেনে চলা একটু কঠিন। কারণ, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বয়সের ভিন্নতা থাকেই। সে ক্ষেত্রে বয়সভেদে প্রতি রুমের জন্য একটি করে এসির ব্যবস্থা করাও অনেকের জন্য সম্ভব হয়ে ওঠে না। আবার যে বাসায় শুধু একটিই এসি আছে, সবাই ওই রুমটাতেই থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সে ক্ষেত্রে কেনার সময়ই এসিতে ভালো মানের ফিল্টার, ইউভি জেনারেটর প্রযুক্তি, বাতাসের পিএম ২.৫ ফিল্টার সক্ষমতা আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। আর এসির তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৮ মধ্যেই রাখা উচিত। অর্থাৎ বাইরের তাপমাত্রা থেকে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি কম তাপমাত্রা রাখতে হবে। এ সতর্কতাগুলো মেনে চললে আশা করি শিশু, নারী ও বয়স্কদের এসির বাতাসে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে না।
নিয়মিত এসির ফিল্টার পরিষ্কার না করলে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে?
মুহাম্মাদ মুনীম: ফিল্টার পরিষ্কার না করলে ধুলা জমতে জমতে এসির ইনডোর ফ্যান ব্লোয়ার ব্লক হয়ে যায়। ফলে বাতাসের প্রবাহ কমে যায়। এ ছাড়া বাতাসে থাকা ধুলাবালি ও পানি মিলে ইনডোরে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস তৈরি করে, যা ডাস্টমাইটের জন্ম দেয়। এর ফলে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ড্রাই কফ, কাশি ইত্যাদি হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে প্রতি সপ্তাহে এসির ফিল্টার পরিষ্কার করা উত্তম। যদি সম্ভব না হয় তাহলে ১৫ দিন অন্তর অবশ্যই সাবান পানি অথবা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এতে করে যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
কিছু কিছু এসি থেকে অতিরিক্ত শব্দ ও দুর্গন্ধ বের হয়। এসবের কারণ কী? সে ক্ষেত্রে নিরাপদ এসির ব্যবহার নিশ্চিতে করণীয় কী?
মুহাম্মাদ মুনীম: এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রুটিন করে ‘এক্সপ্রেস জেট ওয়াশ’ অথবা প্রতিবছর অথরাইজড সার্ভিস সেন্টার থেকে মাস্টার ক্লিনিং করিয়ে নেওয়া ভালো। এতে অতিরিক্ত শব্দ ও দুর্গন্ধের ঝামেলা থেকে ব্যবহারকারী রেহাই পেতে পারেন। তবে যেসব এসিতে ‘সেলফ ক্লিনিং’ ফিচার রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করলে বাড়তি কোনো সার্ভিসিং করাতে হয় না। এসি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিজেই নিজেকে পরিষ্কার করে।
শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে এসিতে কোন ফিচারগুলো থাকা দরকার?
মুহাম্মাদ মুনীম: চারটি ফিচারের কথা বলা যায়। ইনভার্টার, সেলফ ক্লিনিং, পিএম ২.৫ ফিল্টার–সংবলিত এবং এয়ার পিউরিফায়ার প্রযুক্তির ফিচারসমৃদ্ধ এসি শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।
আপনাদের ব্র্যান্ডের এসি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত?
মুহাম্মাদ মুনীম: হায়ার বাংলাদেশ শুধু ঠান্ডার প্রশান্তি নয়, পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে—এমন এসি বাজারজাত করে। হায়ার এসিতে রয়েছে ইউভিসি-প্রো জেনারেটর, সুপার আইএফডি-এয়ার পিউরিফায়ার, সেল্ফ ক্লিনিংসহ স্বাস্থ্যসম্মত ফিচার। বলা যায়, বাংলাদেশে ‘হায়ার’-এর হাত ধরেই এ ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত এসির যাত্রা শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে পিউরিকুল, ইউভিকুল, আল্টিমেটকুল এবং ক্লিনকুলের মতো স্বাস্থ্যসম্মত এসি বাজারজাত করছে হায়ার বাংলাদেশ লিমিটেড।
প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত এসি মেলায় আপনারা অংশ নিয়েছেন। পাঠক এবং আপনাদের গ্রাহকদের উদ্দেশে কী বলার আছে?
মুহাম্মাদ মুনীম: বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় ইনভার্টার–সংবলিত এসির বিকল্প নেই। তাই পাঠক ও গ্রাহকদের বলব, আপনারা এসি বাছাইয়ের সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত ফিচারসমৃদ্ধ কি না দেখে নেবেন। এতে এসির পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর বাতাস উপভোগ করতে পারবেন, যা আপনাকে ঠান্ডা বাতাসের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মুহাম্মাদ মুনীম: আপনাকেও ধন্যবাদ।