উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এসব সংগঠন আগের চেয়ে কম অর্থ পাচ্ছে। তাদের কিছু কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে দেশের নাগরিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে একটি কৌশলপত্র ঠিক করার জন্য তাগিদ দিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বলছে, নাগরিক সংগঠনগুলোর কর্মক্ষেত্রে ক্রমশ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এসব সংগঠন আগের চেয়ে কম অর্থ পাচ্ছে। আবার দেশের অভ্যন্তরেও বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এসব সংগঠন। এতে টেকসই উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ায় নাগরিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা: সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করা নাগরিক সংগঠনের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও নাগরিক সংগঠনের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের মোট বরাদ্দ ৬৩ থেকে কমে ৩৩ শতাংশ হয়েছে। তাহলে কেমন প্রভাব পড়ছে, তা জানতে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ১০৯ সংস্থার ওপর মতামত জরিপ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, মাত্র ২ শতাংশ সংস্থা বলেছে, অর্থপ্রবাহ কমে যাওয়ায় কোনো প্রভাব পড়েনি। এ ছাড়া অর্থের প্রবাহ কম হওয়ায় ওই সব নাগরিক সংগঠনগুলোকে লোকবল কমাতে হয়েছে। কিছু কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। কর্মীর বেতন–ভাতাও কমাতে হয়েছে।
দেশে গণতন্ত্রের ঘাটতি আছে। সুশাসনের অভাব আছে। জনগণের কাছে কি ক্ষমতাসীনদের দায়বদ্ধতা আছে? তাই উন্নতি ঘটাতে হলে নাগরিক সংগঠনের ভূমিকা বাড়াতে হবে।বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন
জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। এটা মেনেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন যে বিদেশি মুদ্রার মজুত আছে, তা দিয়ে পাঁচ-ছয় মাসের খরচ চালানো সম্ভব হবে। পাকিস্তানও সেই পর্যায়ে নেই।
‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, যারা পিছিয়ে আছে, তাদের আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সবার জন্য একই রকম ছকে উন্নয়নকৌশল নিলে হবে না। একেক জনের প্রয়োজন একেক রকম। প্রত্যেকের চাহিদা অনুযায়ী আলাদা পরিকল্পনা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভূমি সংস্কার ও স্থানীয় সরকার—এই দুটি আইন প্রণয়নের সময় নাগরিক সমাজের মতামত নেওয়া হয়েছিল। ফলে আইন দুটির প্রণয়নপ্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক ছিল। তাই সরকারের যেকোনো নীতি গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রশ্ন তোলেন, এখন উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নতি হচ্ছে কি? সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে কি? দেশে গণতন্ত্রের ঘাটতি আছে। সুশাসনের অভাব আছে। জনগণের কাছে কি ক্ষমতাসীনদের দায়বদ্ধতা আছে? তাই উন্নতি ঘটাতে হলে নাগরিক সংগঠনের ভূমিকা বাড়াতে হবে।
একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নাগরিক সংগঠনগুলোকে বিদেশিদের অর্থের মুখাপেক্ষী হতে হয়। উন্নয়ন সহযোগীরা যদি অর্থ না দেয়, তাহলে কীভাবে চলবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা করা দরকার।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও অনেক দেশ মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে আছে। ২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে, তখনো যদি দরিদ্র মানুষ নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে উন্নত দেশ হলাম কীভাবে? এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দক্ষ শ্রমিক লাগবে। ওই সময়ে নাগরিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। বিদেশিদের অর্থ কমিয়ে দেওয়ার একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটি বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের একটি সিদ্ধান্তের কারণে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ১২০টি অংশীদার সংগঠনের সহযোগিতা বন্ধ করতে হয়েছে। ছোট ছোট নাগরিক সংগঠন এখন বন্ধ হওয়া পথে।