প্রযুক্তি ও আর্থিক স্বাধীনতা একে অপরের পরিপূরক

রাজধানী বা জেলার বেসরকারি ব্যাংক শাখার চাকচিক্য দেখে পুরুষেরা অনেক সময় প্রবেশে ভয় পান। সে ক্ষেত্রে নারীরা আরও বেশি ভয় পান, এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পুরুষের তুলনায় নারী গ্রাহক অর্ধেকের কম। তবে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং–সেবা বাড়ির দোরগোড়ায় চলে যাওয়ায় এই দুই ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ গ্রাহক প্রায় সমান। এতে নারীরা এখন নিজের অর্থ নিজের হিসাবে জমা রাখছেন। নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় আনতেও এই দুই সেবা বড় ভূমিকা রাখছে।

মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস), যেমন বিকাশ, রকেট ও নগদের গ্রাহকেরা মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা নিতে পারছেন। এখন হিসাব খোলার জন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না তাঁদের। নিজের মুঠোফোনেই নিজেই হিসাব খুলতে পারছেন। আর এজেন্ট ব্যাংকগুলো পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে। ফলে এই দুই সেবায় নারীর অংশগ্রহণ আর্থিক সেবার অন্যান্য খাতের চেয়ে বেশি।

জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ গ্রাহকের হিসাব ছিল ৮৭ লাখ ৯৫ হাজার। একই সময়ে নারী গ্রাহকের হিসাব ছিল ৮৪ লাখ ২১ হাজার। এজেন্ট ব্যাংকিং–সেবা দেওয়া কোনো কোনো ব্যাংকের নারী হিসাব ও পুরুষ হিসাব প্রায় সমান। ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের ৬০ শতাংশের বেশি নারী।

প্রবাসীরা ব্যাংকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠালে তা সহজেই বাড়ির পাশের এজেন্ট পয়েন্ট থেকে তুলতে পারছেন তাঁদের স্ত্রী ও অভিভাবকেরা। আবার সরকারি ভাতাও এখন এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে ১১ বছর আগে চালু হওয়া এমএফএস খাতের এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে বিকাশ। এরপরই আছে নগদ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়, ট্যাপসহ আরও কয়েকটি সেবা। এই সেবায় হিসাব খোলা থেকে টাকা জমা ও খরচ নিজেই করা যাচ্ছে। ফলে সেবা নিতে কারও কাছে যেতে হচ্ছে না। নিজের মুঠোফোনে নিজের হিসাব—এ কারণে এমএফএস সেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই সেবায় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত (নগদ বাদে) গ্রাহক ছিল ১৯ কোটি। এর মধ্যে ১১ কোটি ৮৯ লাখ পুরুষ গ্রাহক ও ৪ কোটি ৫৩ লাখ নারী গ্রাহক। একজন গ্রাহক একাধিক সেবায় হিসাব খুলতে পারেন, সে জন্য নারী-পুরুষ গ্রাহকের হিসাবে তারতম্য হতে পারে। দেশজুড়ে ৩৫ হাজার এজেন্ট মোবাইল ব্যাংকিং–সেবা দিচ্ছে।

রকেটের মূল প্রতিষ্ঠান ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং—এই দুই সেবা বাড়ির পাশে পৌঁছে গেছে। এ জন্য নারী হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে। এখন সেবা নিতে অপরিচিত কারও কাছে যেতে হচ্ছে না। ফলে নারীরা এখন নিজের হিসাবে টাকা জমা রাখতে পারছেন। এতে নারীর স্বাধীনতা বেড়েছে।