বিশ্বখ্যাত ১০টি কোম্পানি বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের ৫০ শতাংশ সরবরাহ করছে। এবিসিডি হিসেবে পরিচিত ইউরোপ-আমেরিকার চার কোম্পানির হাতে রয়েছে এক-চতুর্থাংশ বাজার।
এক দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সরবরাহের বাজার থেকে হারিয়ে গেছে ব্রিটিশ কোম্পানি সিজার্নিকো, হংকংভিত্তিক নোবেল, দুবাইভিত্তিক হাকান এগ্রো, সিঙ্গাপুরের পার্সরাম কিংবা ফিনিক্স কমোডিটিজ প্রাইভেটের মতো বহু কোম্পানি। এসব কোম্পানির কোনোটির ব্যবসা করোনার সময় বন্ধ হয়ে গেছে, কোনোটি বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। আবার ভারতীয় আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সিঙ্গাপুরভিত্তিক সুইস সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেইনকর্প, অ্যাগ্রোমিন কিংবা এক্সপোর্ট ট্রেডিং গ্রুপ বা ইটিজির মতো কোম্পানির ব্যবসার অংশীদারত্ব কমেছে এ দেশে। কৃষিপণ্য সরবরাহের সেই জায়গা নিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকাভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
দেশে কৃষিপণ্যের আমদানির বাজার দ্রুত বড় হচ্ছে। এই বাজারে কৃষিপণ্য সরবরাহ অর্থাৎ বাংলাদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আধিপত্য বাড়ছে বৈশ্বিক বড় কোম্পানিগুলোর। গত এক দশকের ব্যবধানে এ বাজারে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে ইউরোপ-আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
নেদারল্যান্ডসের কৃষিপণ্য সরবরাহকারী বহুজাতিক কোম্পানি ভিটেরার কথাই ধরা যাক। বছর পাঁচেক আগেও বাংলাদেশের বাজারে তাদের অংশীদারত্ব ছিল খুবই কম। যেমন ২০১৮ সালে বহুজাতিক কোম্পানিটি ৩৫ কোটি ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে গত বছর এই বহুজাতিক কোম্পানির বাংলাদেশে রপ্তানি বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল কিংবা আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ডেরও (এডিএম) বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সরবরাহ ব্যবসার প্রসার ঘটছে দ্রুত।
এক দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সরবরাহের বাজার থেকে হারিয়ে গেছে ব্রিটিশ কোম্পানি সিজার্নিকো, হংকংভিত্তিক নোবেল, দুবাইভিত্তিক হাকান এগ্রো, সিঙ্গাপুরের পার্সরাম কিংবা ফিনিক্স কমোডিটিজ প্রাইভেটের মতো বহু কোম্পানি। এসব কোম্পানির কোনোটির ব্যবসা করোনার সময় বন্ধ হয়ে গেছে, কোনোটি বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। আবার ভারতীয় আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সিঙ্গাপুরভিত্তিক সুইস সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেইনকর্প, অ্যাগ্রোমিন কিংবা এক্সপোর্ট ট্রেডিং গ্রুপ বা ইটিজির মতো কোম্পানির ব্যবসার অংশীদারত্ব কমেছে এ দেশে। কৃষিপণ্য সরবরাহের সেই জায়গা নিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকাভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
পণ্য সরবরাহের বাজারে এই পরিবর্তনের দুটো দিক রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বিশ্বের বহু দেশ থেকে এসব বহুজাতিক কোম্পানির যেমন পণ্য সংগ্রহের বিস্তৃতি আছে, তেমনি পণ্য সরবরাহের জন্য বন্দরসেবা, সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতের সুবিধা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখার মতো অঙ্গীকার রক্ষা করায় তাদের অংশীদারত্ব বাড়ছে। তবে গুটিকয় কোম্পানির ওপর নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানিতে বিকল্প উৎস সীমিত হয়ে যাচ্ছে বলেও আলোচনা বা সমালোচনা রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২২ সালে প্রধান ৯টি কৃষিপণ্যের আমদানিমূল্য ছিল ১ হাজার ৫১৬ কোটি মার্কিন ডলার। তাতে শীর্ষ দশে থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সরবরাহ করেছে ৭৫১ কোটি ডলারের পণ্য বা ৫০ শতাংশ। যেখানে ইউরোপ-আমেরিকার ছয়টি কোম্পানির ভাগ ৫১৯ কোটি ডলার বা ৩৪ শতাংশ।
চাল, ডাল, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ, তুলা, ভুট্টা ও সয়াকেক—এই প্রধান ৯টি কৃষিপণ্যের আমদানি তথ্যে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চাল ছাড়া অন্য আটটি পণ্যই সরবরাহ করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
এসব কৃষিপণ্য সরবরাহের বাজারে শীর্ষস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি (এলডিসি)। ২০২২ সালে ১৮২ কোটি ডলারের ১৬ লাখ টন কৃষিপণ্য সরবরাহ করেছে বহুজাতিক এই কোম্পানি। ১৭২ বছর বয়সী এই কোম্পানির মূল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সুইজারল্যান্ড থেকে। ২০২১ সালে তাদের বার্ষিক বিক্রি ছিল প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। বহুজাতিক এই কোম্পানি বাংলাদেশে মূলত বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ, চিনি, গম ও সয়াকেক সরবরাহ করে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, আইভরি কোস্ট, ক্যামেরুনসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের অন্তত ১৭টি দেশ থেকে তারা বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ করেছে গত বছর।
কৃষিপণ্য সরবরাহে দ্বিতীয় স্থানটি নেদারল্যান্ডসের ভিটেরার হাতে। গত বছর তারা ১২২ কোটি ডলারের প্রায় ১৫ লাখ টন পণ্য সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে। বিশ্বের ১৩টি দেশ থেকে পণ্য সরবরাহ করেছে তারা। পণ্যের তালিকায় রয়েছে ডাল, গম, তৈলবীজ, ভোজ্যতেল, চিনি ও তুলা।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিঙ্গাপুরভিত্তিক ওলাম গ্রুপ গত বছর ১১৪ কোটি ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছে। তাদের সরবরাহ করা পণ্যের সিংহভাগই কাঁচা তুলা। এ ছাড়া রয়েছে ডাল, গম, তৈলবীজ ও পামতেল।
কৃষিপণ্য সরবরাহের ব্যবসায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল গত বছর বাংলাদেশে ৯৭ কোটি ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছে। কোম্পানিটি বিশ্বের ১৬টি দেশ থেকে গম, তৈলবীজ, ভোজ্যতেল, সয়াকেক, তুলা সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে।
সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রোকর্প বাংলাদেশে ব্যবসা করেছে ৬০ কোটি ডলারের। বিশ্বের ১৬টি দেশ থেকে ডাল, গম, তৈলবীজ ও তুলা সরবরাহ করেছে তারা। নেদারল্যান্ডস থেকে যাত্রা করা যুক্তরাষ্ট্রের বুঙ্গি গত বছর ৪৯ কোটি ডলারের সাড়ে সাত লাখ টন পণ্য সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে। পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, তৈলবীজ, ভোজ্যতেল ও সয়াকেক।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কোম্পানি আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড বা এডিএম গত বছর ৩৮ কোটি ডলারের ব্যবসা করেছে এ দেশে। বিশ্বের ১১টি দেশ থেকে ডাল, গম, তৈলবীজ, ভোজ্যতেল, তুলা ও সয়াকেক সরবরাহ করেছে তারা।
শীর্ষ দশের তালিকায় শেষ দিকে রয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক রেইজেন ট্রেডিং, সিঙ্গাপুরভিত্তিক পামতেল কোম্পানি গোল্ডেন অ্যাগ্রি রিসোর্সেস এবং অস্ট্রেলিয়ার জে কে ইন্টারন্যাশনাল।
শীর্ষস্থানে থাকা সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান এলডিসির এ দেশীয় প্রতিনিধি গোল্ডেন হারভেস্ট গ্রুপের কর্মকর্তা আবু তাহের সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রয় চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে জাহাজে পণ্য বোঝাই, চুক্তির পর দাম বেড়ে গেলেও সরে না আসা, ভালো মানের জাহাজে পণ্য সরবরাহের মতো নিশ্চয়তা দিচ্ছে এলডিসির মতো বড় কোম্পানিগুলো। এ জন্যই বৈশ্বিক বড় সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে দেশীয় আমদানিকারকেরা। তাতে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও তাদের অংশীদারত্ব বাড়ছে।
কৃষিপণ্যের ব্যবসায় মোগলের আসনে থাকা ইউরোপ-আমেরিকার চার কোম্পানি বৈশ্বিক শস্যবাজারের বড় অংশই নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশে মোট কৃষিপণ্য সরবরাহের এক–চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই চার কোম্পানির হাতে। চারটি কোম্পানি হলো এডিএম, বুঙ্গি, কার্গিল ও লুইস ড্রেইফাস। সংক্ষেপে এ চারটি কোম্পানি ‘এবিসিডি’ নামে পরিচিত।
কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোয় তারা পণ্য সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগ করেছে। আবার ফসলের মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের থেকে পণ্য সংগ্রহ করে নিজেদের শস্যগুদামে রেখে দিচ্ছে। এরপর সময়মতো সেখান থেকে আমদানিকারক দেশে পাঠাচ্ছে তারা। পণ্য সংগ্রহ থেকে আমদানিকারকের গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত কৃষি, বন্দরসেবা ও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনেও তারা বিপুল বিনিয়োগ করছেন। তাতে শস্যসহ কৃষিপণ্য কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এসব কোম্পানির হাতে। বিশ্বের বহু দেশে কার্যালয় থাকলেও সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশ থেকে তারা মূল কার্যক্রম পরিচালনা করে।
শীর্ষস্থানীয় চারটি কোম্পানির সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চারটি কোম্পানির বাজার অংশীদারত্ব বাস্তবে আরও বেশি। কারণ, সিঙ্গাপুরভিত্তিক কয়েকটি কোম্পানিও এই এবিসিডি কোম্পানিগুলো থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে।
নেদারল্যান্ডসের ভিটেরা গত বছরের অক্টোবরে তাদের ‘করপোরেট ভাউচারে’ গ্রাহকদের মতামত ছাপিয়েছে। সেখানে কানাডার এক কৃষিপণ্য উৎপাদক এবং বাংলাদেশের বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরীর মতামত তুলে ধরা হয়। ২০১০ সাল থেকে ভিটেরার কাছ থেকে পণ্য আমদানি করে আসছে চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপ।
করপোরেট ভাউচারে এমন মতামত ছাপিয়ে মূলত এ দেশের কৃষিপণ্যের সরবরাহের বাজারে অংশীদারত্ব বাড়াতেই মনোযোগ দিয়েছে ভিটেরা। শুধু বিএসএম নয়, আমদানি করা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতে যুক্ত দেশীয় বড় শিল্পগ্রুপগুলো এখন বহুজাতিক এ কোম্পানি থেকেই পণ্য আমদানি করে। আমদানি করা কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদনমুখী কারখানাও গড়ে তুলেছে দেশীয় বড় গ্রুপগুলো। এই তালিকায় রয়েছে দেশীয় সিটি, মেঘনা, টিকে, বসুন্ধরা, এস আলম ও আকিজ গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান।
জানতে চাইলে বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎপাদক দেশগুলো থেকে পণ্য সংগ্রহ, বন্দরকেন্দ্রিক টার্মিনাল, পরিবহন ও সংরক্ষণাগারের মতো সুবিধা রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। বিশ্বের নানা স্থান থেকে কৃষিপণ্য তারা সংগ্রহ করে দিতে পারে। কোনো অঘটন হলেও চুক্তি থেকে সরে আসে না। এ কারণে বড় গ্রুপ থেকে পণ্য আমদানির বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।’
বাংলাদেশে যেসব কৃষিপণ্য আমদানি হয়, তা মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে তিনটি খাতে। খাত তিনটি হলো, মানুষের খাদ্য, প্রাণিখাদ্য ও রপ্তানিপণ্যের কাঁচামাল। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ায় ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ছে। মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খাতের আকার বাড়তে থাকায় তৈলবীজ ও ভুট্টার আমদানিও বাড়ছে। আবার পোশাক রপ্তানির বাজার বড় হওয়ায় সুতা ও কাপড় তৈরির কাঁচামাল তুলার আমদানিও বেড়ে চলেছে।
এক দশকে বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ আমদানিকারক দেশের একটিতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে, বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা আমদানিতে বাংলাদেশ প্রথম কিংবা দ্বিতীয়, সয়াবিন তেলে তৃতীয়, পামতেলে ষষ্ঠ, গমে সপ্তম, চিনির কাঁচামাল আমদানিতে চতুর্থ ও তৈলবীজ আমদানিতে নবম অবস্থানে রয়েছে।
বাজার কেমন বড় হচ্ছে, তার কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্যে। কৃষিপণ্য আমদানিতে এক দশকে বাংলাদেশ দশটি দেশকে পেছনে ফেলেছে। যেমন ২০১২ সালে কৃষিপণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ছিল ৪৫তম। ২০২১ সালে ৩৫তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যবসা করছে। তবে বাজার বড় হতে থাকায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে শাখা খোলা বা সরাসরি কর্মকর্তা নিয়োগেরও পরিকল্পনা করছে এখন। দেশে বর্তমানে সুইস সিঙ্গাপুর ও ইটিজির শাখা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল এজেন্টের পাশাপাশি ফুড ইনগ্রেডিয়েন্ট বিভাগে জনবল নিয়োগ দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রোকর্প তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, গত বছর তারা বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্বকারী কার্যালয় খুলেছে।
বাংলাদেশে আমদানি হওয়া প্রধান ৯টি কৃষিপণ্যের মধ্যে নেদারল্যান্ডসে উৎপাদিত কোনো পণ্য নেই। এরপরও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিই বাংলাদেশ কৃষিপণ্য সরবরাহে শীর্ষে রয়েছে। আবার সিঙ্গাপুরে উৎপাদিত কোনো কৃষিপণ্য আসে না বাংলাদেশে। এরপরও বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের শীর্ষ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটিই সিঙ্গাপুরের। আবার গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত ৮৫ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। তবে দেশটির বহুজাতিক কোম্পানি কার্গিল একাই বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ৯৭ কোটি ডলারের পণ্য। মূলত অন্য দেশ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে সরবরাহ করছে তারা।
আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রধান ৯টি কৃষিপণ্য আসছে মূলত বিশ্বের ৬১টি দেশ থেকে। বিশ্বখ্যাত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব দেশে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত অবকাঠামোয় বিনিয়োগ রয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে পণ্য পাঠাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন কম। এ কারণে দেশটি থেকে রপ্তানিও কম। তবে আমদানি করা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। আবার বৈশ্বিক সরবরাহকারী হিসেবে নেই বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি।
বাংলাদেশে বড় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। বছরখানেক আগেও একটি শিল্পগোষ্ঠী বিদেশে পণ্য বেচাকেনার অনুমোদন পেতে চেষ্টা করেছিল। আবার আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদের জন্য চুক্তি করেছিল। এ বিষয়গুলো নিয়ে আর অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদক বা স্থানীয় বণিকদের থেকে পণ্য সংগ্রহ সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ জন্য উৎপাদক দেশে কার্যালয় খোলা, বিনিয়োগ ও দক্ষ জনবলের দরকার। আবার আইনকানুনও সহজীকরণ করতে হবে। এমন বিনিয়োগের পরিস্থিতি এখন অনুকূলে না হলেও ভবিষ্যতে বাইরে ট্রেডিং (বাণিজ্য) করার সুযোগ আছে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বড় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে এক জায়গায় নানা সুবিধা পাওয়া যায় বলে তাদের ওপর নির্ভরতা বেশি আমদানিকারকদের। তবে আমদানিতে নতুন নতুন বিকল্প উৎস হাতে রাখা দরকার। তাতে শুরুতে খরচের ঝুঁকি থাকলেও উৎসের বৈচিত্র্য বাড়ালে মধ্য মেয়াদে সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এতে যেমন হাতে বিকল্প উৎস থাকবে, তেমনি বড় সরবরাহকারীদের সঙ্গে দর-কষাকষির সুযোগও বাড়বে।