মুরগিবাজার অস্থির। দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, দাম ২০০ টাকার বেশি হওয়া অযৌক্তিক। কারণ, খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। আর প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
অধিদপ্তরের এই তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে আজ সোমবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গত রোববার বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ৯ মার্চ পোলট্রিশিল্পের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সভা করেন। সেই সভার মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। মুরগিবাজারের বর্তমান অবস্থার ওপর দেওয়া এই প্রতিবেদনে আটটি সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য সব ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাতে বর্তমান উৎপাদন খরচ অনুযায়ী প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে।
বাজারে মুরগির দাম এখন আসলেই কত হওয়া উচিত, তা আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে অনুরোধ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে সরকারের আরেক প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রিশিল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মুরগির দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
মুরগির দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পোলট্রির খাবার ও মুরগির বাজারে অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান, দোকান ও বাজারে প্রতিদিনের মূল্যতালিকা প্রদর্শন, কোনো বাজারে মূল্যতালিকা না টাঙানো হলে সেই বাজারের কমিটি বিলুপ্তি, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও রোজা উপলক্ষে পোলট্রি বাজারে স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর-সংস্থার সমন্বয় করে দেশব্যাপী নিবিড়ভাবে বাজার তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করা।
এ ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশও করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। একই সঙ্গে একচেটিয়াভাবে মুরগির বাজার কারও দখলে চলে যাচ্ছে কি না, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
এক দিনের ব্যবধানেই খুচরা বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। আজ রাজধানীর কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর সোনালি মুরগির খুচরা দাম ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা। তাতে গত দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি।
পোলট্রি খামারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত শবে বরাতের পর মুরগির দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। এবার ভিন্ন পরিস্থিতি। প্রতি সপ্তাহেই মুরগির দাম বেড়েছে। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়ল। শেষ পর্যন্ত এই দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাজারে দাম যতই বাড়ুক, প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিরা মুরগির যৌক্তিক দাম পাওয়া থেকে এখনো বঞ্চিত।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসি) সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে দাম বেশি থাকলেও খামার পর্যায়ে দাম সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। দাম বাড়ার কারণে অনেকে খামারে মুরগি ওঠাতে চাইলেও বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না। গুটিকয় ব্যবসায়ী মুরগির বাচ্চার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। খাবারের বাজারও তাঁদের দখলে। এতে ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য দিন দিন পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।