বাজারে নতুন পেঁয়াজ ও আলু আসতে শুরু করেছে। এরপরও কমছে না এই দুই পণ্যের দাম। সাধারণত ডিসেম্বরের শুরুতে বাজারে নতুন আলু, পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে তখন দামও কমতে শুরু করে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ করে বেড়ে যায় এই দুই পণ্যের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে তাই আলু ও পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। আমদানির সিদ্ধান্তের পরও বাজারে তার বড় কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। উচ্চ মূল্যেই স্থিতিশীল হয়ে আছে এ দুটি পণ্য।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ ও আলু আসা শুরু করলেও এখনো তা পরিমাণে যথেষ্ট নয়। এ কারণে দামে বড় কোনো প্রভাব পড়ছে না। তা ছাড়া এখন বাজারে যেসব আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তার বেশির ভাগই আমদানি করা। দুটি পণ্যই আমদানি করা হচ্ছে ভারত থেকে। ডলারের বাড়তি দামের কারণে আমদানি খরচও বেশি। তাই বাজারে নতুন আলু, পেঁয়াজ আসতে শুরু করলেও দামে তার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বাজারে নতুন আলু, পেঁয়াজের ব্যাপক সরবরাহ শুরু হলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর খুচরায় পুরোনো আলুর কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। বাজারে নতুন আসা আলুর কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এর বাইরে বাজারে আসা নতুন পেঁয়াজপাতাসহ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের বাড়তি দামের কারণে আমদানিতে খরচ এবার বেশি পড়ছে। নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় এখনো তা কম। তাই দাম কমছে না। আশা করছি ১৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কমে আসবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মঙ্গলবারের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। গত বছরের এ সময়ে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
এ ছাড়া টিসিবির হিসাবে, বাজারে এখন প্রতি কেজি আলুর দাম ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। গত বছরের এই সময়ে দাম ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাজারে এখন আলুর দাম দ্বিগুণের বেশি।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হিমাগারগুলোতে আলু প্রায় শেষের দিকে। কোথাও কোথাও ৫ শতাংশের মতো আলু আছে। এগুলো দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে চলে আসবে। এর মধ্যে বাজারে নতুন আলুও চলে আসবে। নতুন আলুর সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে।
সরকার গত ৫ জুন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। আর আলু আমদানির অনুমতি দেয় গত ৩০ অক্টোবর। সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, চলতি ৩০ অক্টোবর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আলু আমদানি হয়েছে ৩৮ হাজার টন। আর গত জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টনের বেশি। তবে দেশে উৎপাদিত আলু ও পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় এখন আলু ও পেঁয়াজের আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
এর আগে বাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয় সরকার। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। দাম বেঁধে দিলেও বাজারে এই দাম কার্যকর হয়নি।