ঢাকার বাজারে ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিমের দাম মাস দুয়েক সহনীয় পর্যায়ে থাকার পর এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। তাতে সাধারণ ক্রেতারা অস্বস্তিতে পড়ছেন। নতুন করে দাম বাড়ার দুটি কারণ জানা গেছে। প্রথমত, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাংস ও ডিম উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, শীতকালীন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের হার বাড়ায় চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দুইয়ে মিলে মুরগির মাংস ও ডিমের দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় বাজারে তদারকি বাড়ালে বড় সংকট হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রায়ই বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এই পরিস্থিতি কেন হচ্ছে, তার কারণ খুঁজে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সেটি না হওয়ায় দাম বাড়লেই ব্যবসায়ী ও খামারিদের দোষারোপ করা হয়। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে গিয়ে খামারিরা লোকসান করলে তা নিয়ে কেউ ভাবেন না।সুমন হাওলাদার, সভাপতি, বিপিএ
গতকাল শনিবার রাজধানীর মগবাজার ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে
জানা গেছে, ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে গত সপ্তাহে। চলতি সপ্তাহেও সেই ধারাবাহিকতা আছে। আর দুদিন ধরে বাজারে মুরগির মাংসের দামও বাড়তি। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজির দাম ছিল ১৮০ টাকার আশপাশে। সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে একই হারে। বাজারে এখন প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। কোথাও কোথাও উভয় পদের মুরগির দাম আরেকটু বেশিও চাওয়া হচ্ছে। তবে দরদাম করে নিলে এই দামের মধ্যে কেনা সম্ভব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা আমান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শীতের সময় বিয়ে ও পিকনিকের মতো আয়োজন অনেক বেশি থাকে। তাতে ডিম-মুরগির চাহিদা বাড়ে। ফলে দামও বেড়ে যায়। আর খাবারের দাম আরেক দফা বাড়ায় খামার থেকে মুরগি এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
বাজারে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির বাদামি রঙের প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আর সাদা ডিমের ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা জানান, শুক্রবার রাতে পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০ টাকায়। আর প্রতি ১০০ সাদা রঙের ডিমের দাম পাইকারিতে চলছে ৯৯০ থেকে ১ হাজার টাকা।
মগবাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। পাইকারিতে দাম বাড়লে খুচরা বাজারে তা সমন্বয় হয়। তবে সরবরাহ এখনো ভালো রয়েছে বলেন জানান তিনি।
শীতকালে সাধারণত নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি থাকে। আবার শীতের প্রকোপ বেড়ে গেলে মুরগির নানা রোগবালাই দেখা দেয়। তাতে মাংস ও ডিমের উৎপাদনে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই তুলনায় চাহিদা থাকে বেশি। ফলে দামে প্রভাব পড়ে।
এদিকে খামারিরা জানান, মধ্যে কিছুদিন তাঁরা ডিম-মুরগির দাম কম পেয়েছেন। সে জন্য তাঁদের অনেকে শীতের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন বাড়াতে চাননি। এরই মধ্যে আবার খাবারের দাম বাড়ায় অনেকে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ উৎপাদন ছেড়েছেন। সব মিলিয়ে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে বাজারে ডিম ও মুরগি সরবরাহে এখনো বড় কোনো সংকট নেই। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দাম আর বাড়বে না বলেই মনে করেন তাঁরা।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ডিম ও মুরগির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না। এ জন্য প্রায়ই বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এই পরিস্থিতি কেন হচ্ছে, তার কারণ খুঁজে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সেটি না হওয়ায় দাম বাড়লেই ব্যবসায়ী ও খামারিদের দোষারোপ করা হয়। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে গিয়ে খামারিরা লোকসান করলে তা নিয়ে কেউ ভাবেন না। দিন শেষে পোলট্রি খাত অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে দাবি তাঁর।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মুরগির খামার আছে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার। করোনার আগে সংখ্যাটি ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের ওপর। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটির বেশি ডিম ও ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। পোলট্রি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬০ লাখ লোকের, আর বাজারের আকার ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।