জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেও এবার সবজির দাম চড়া। শীতের ভরা মৌসুমে সাধারণত বাজারে নানা পদের সবজি দেখা যায়। দামও থাকে তুলনামূলক কম। কিন্তু এবার সবজির বাজারে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। দাম না কমে বরং বাড়ছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ ও রামপুরা বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে বেগুন। প্রতি কেজি বেগুনের দাম পড়ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। লাউয়ের দামেও সেঞ্চুরি। বড় আকারের প্রতিটি লাউ ১০০ টাকার নিচে নেই। দরদাম করে নিলে কোথাও কোথাও হয়তো ১০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। মানভেদে টমেটোর কেজি রাখা হচ্ছে ৬০ থেকে ৯০ টাকা। মানভেদে শিমের কেজি পড়ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা।
মাঝারি আকারের প্রতিটি ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকলির দাম হাঁকা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। দরদাম করে নিলে কিছুটা কমে পাওয়া গেলেও তখন আপস করতে হচ্ছে মানের সঙ্গে। সবজির মধ্যে ৫০ টাকার মধ্যে আছে মাত্র তিনটি সবজি—মুলা, ওলকপি (শালগম) ও পেঁপে। করলার কেজি পড়ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকার আশপাশে। বাজারে গ্রীষ্মের সবজি হিসেবে পরিচিত ঝিঙে ও ধুন্দুলের দাম পড়ছে কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। নতুন দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এবার আলুর দাম বেশি। তাতে অন্যান্য সবজির দাম কমছে না। কারণ, সবজির মধ্যে আলু কমবেশি সবাই কেনেন। সেটাই বাড়তি দামে কিনতে হলে বিক্রেতারা অন্যান্য সবজির দাম আর কমান না।
এবার শীতের পুরো মৌসুমেই বাজারে সবজির দাম বেশি দেখা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে একটু কমলেও ভরা মৌসুমে এসে সবজির বাজার যেভাবে নামতে শুরু করে, এবার সেই প্রবণতা নেই। উল্টো মৌসুমের শেষ দিকে এসে সবজির দাম বাড়তি দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এবার আলুর দাম বেশি। তাতে অন্যান্য সবজির দাম কমছে না। কারণ, সবজির মধ্যে আলু কমবেশি সবাই কেনেন। সেটাই বাড়তি দামে কিনতে হলে বিক্রেতারা অন্যান্য সবজির দাম আর কমান না।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম মৌসুমের শুরু থেকেই বাড়তি। এখনো পর্যাপ্ত সবজি বাজারে আসছে না, তাই দাম কমছে না। তবে বাজারে কেউ সুযোগ নিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদারকি হওয়া প্রয়োজন। এবার শীতে সবজির বাজার অনেকটা উল্টো আচরণ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডাল ও ছোলার দাম এবার রমজানের বেশ আগেভাগে বেড়ে গেছে। চিনির বাজারে অনেক দিন ধরে কোনো পরিবর্তন নেই। অন্যান্য পণ্যের দাম না বাড়লেও কোনোটাই কমছে না।রামপুরা বাজারের মহিউদ্দিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন আহমেদ
এদিকে বাজারে চাল, ডাল ও তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পবিত্র রমজান সামনে রেখে ইতিমধ্যে ছোলার দাম এক দফা বেড়েছে। ডালজাতীয় পণ্যের দাম মানভেদে ওঠানামার মধ্যে আছে। এক মাসের মধ্যে নতুন করে কয়েক পদের মসলা, আটা ও ময়দার দামও বেড়েছে। চিনির বাজারেও নেই কোনো পরিবর্তন। খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা কেজি।
রাজধানীর রামপুরা বাজারের মহিউদ্দিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ডাল ও ছোলার দাম এবার রমজানের বেশ আগেভাগে বেড়ে গেছে। চিনির বাজারে অনেক দিন ধরে কোনো পরিবর্তন নেই। অন্যান্য পণ্যের দাম না বাড়লেও কোনোটাই কমছে না।
শীতের সবজির দাম শুরুতে বেশি থাকে। পরে দ্রুত দাম নেমে আসে। এবার সেটা হলো না। বিষয়টা অবাক করার মতো। হয়তো আমরা বেশি দামে কিনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না।মধুবাগের বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান
বাজারে সবজির পাশাপাশি মাছ, মাংস ও ডিমের দামও চড়া। ব্রয়লার মুরগির দাম পড়ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের কেজি পড়ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি। চাষের রুইয়ের কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আকারভেদে তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। প্রতি ডজন বাদামি ডিমের দাম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
রাজধানীর মধুবাগের বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীতের সবজির দাম শুরুতে বেশি থাকে। পরে দ্রুত দাম নেমে আসে। এবার সেটা হলো না। বিষয়টা অবাক করার মতো। হয়তো আমরা বেশি দামে কিনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না।’