মোবাইলে আর্থিক সেবা ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় ছয় কর্মকর্তাকে ‘সহায়ক কর্মকর্তা’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা কাল বৃহস্পতিবার নগদ কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বুঝে নেবেন। এর পর থেকে তাঁরাই নগদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাতিল হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির পুরো নিরীক্ষা করতে হবে। এ কাজ শেষ করতে সময় প্রয়োজন হবে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক সেবা চলমান থাকবে। নিরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠানটির ভাগ্য নির্ধারিত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ এক অভ্যন্তরীণ আদেশ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’-এ চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে এক বছরের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার উল্লাহ, পলাশ মন্ডল, আবু ছাদাত মোহাম্মদ ইয়াছিন, উপপরিচালক চয়ন বিশ্বাস ও আইয়ুব খানকে সহায়ক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগদ ডাক বিভাগের সেবা। তাদের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক সেবাটি পরিচালনা করবে।’
মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশের পরই এখন নগদের অবস্থান। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নানা প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মেনে চলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও আদতে এতে সরকারের কোনো অংশীদারত্ব নেই। নগদের মালিকানায় বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা নূর, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। ২০১৭ সালের ডিসেম্ববে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় মোবাইলে আর্থিক সেবা পরিচালনার জন্য থার্ড ওয়েভকে কাজ দেয়।
২০১৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগদের উদ্বোধন করেন। পরে বিভিন্ন সময়ে এর মালিকানায় যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যথাযথ গ্রাহক তথ্য যাচাই (কেওয়াইসি) ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল গ্রাহকদের নিজস্ব গ্রাহক বানিয়ে ফেলার সুযোগ পায় নগদ। সরকারের সব ভাতা বিতরণেরও একচ্ছত্র সুবিধা পায় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সরকারি ভাতা পেতে নগদের গ্রাহক হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। নগদে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন তানভীর আহমেদ, নিয়াজ মোর্শেদ ও মারুফুল ইসলাম।
নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। নগদকে জড়িয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে অপপ্রচার চলছিল, এর মাধ্যমে তার অবসান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কয়েক দিন ধরে অপপ্রচারের এসব বিষয় নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। অবশেষে তারা প্রশাসক নিয়োগের মতো একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তানভীর আহমেদ আরও বলেন, এর আগে কয়েকটি ব্যাংকসহ দেশের আর্থিক খাতের বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান এবং শীর্ষ মোবাইল অপারেটরেও সরকার প্রশাসক নিয়োগ করেছিল। নগদ বিশ্বাস করে, গত পাঁচ বছরের গ্রাহকসেবায় নগদ যেভাবে শীর্ষে ছিল, সেভাবে শীর্ষেই থাকবে।