বিলাসিতার সামগ্রী নয়, এসি এখন প্রয়োজনের সামগ্রী। তাই ঘরে এসি ব্যবহারে মানুষ এখন কার্পণ্য করছেন না। ভিন্ন ভিন্ন কক্ষের মতো একটি বাড়িতে থাকেন ভিন্ন বয়সের মানুষ। প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু, প্রবীণ। একেকজনের শরীর ও ত্বকের ধরন একেকরকম। তাই এসি ব্যবহারের ধরনও বদলে যায়। বিশেষ করে শিশু এবং প্রবীণদের ক্ষেত্রে।
যেসব বাড়িতে শিশু এবং প্রবীণেরা আছেন, তারা কীভাবে এসি ব্যবহার করবেন? এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ওয়ালটন ইলেকট্রনিকসের উপ-নির্বাহী পরিচালক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরে ‘‘হিট মেকানিজম’’ বলে একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক তাপমাত্রার সঙ্গে শরীর নিজেকে মানিয়ে নেয়। তবে এসি খুব কম তাপমাত্রায় চালানো থাকলে বাইরের সঙ্গে ঘরের তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য তৈরি হয়। ফলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অনেকেই বাইরে থেকে এসে সরাসরি এসিযুক্ত কক্ষে প্রবেশ করছেন। এ কারণে দেহের তাপমাত্রা হুট করে বদলে যাচ্ছে।
এতে ইমিউনিটিও কমে যায়। তাই এসির তাপমাত্রা নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি। শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সচেতনতা দরকার।’
আরিফুল ইসলাম জানান, বাড়িতে প্রবীণ মানুষের এসি ব্যবহারে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। ঘুমানোর পর শরীরের তাপমাত্রা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রিত হয় না। তাই এসির তাপমাত্রা অনেকটা কমিয়ে দিলে সকালে উঠে সমস্যা হতে পারে। এ কারণে প্রবীণ ব্যক্তি যে ঘরে ঘুমাবেন, সেই ঘরের এসি রাতে ১৬ বা ১৮-তে চালানো যাবে না, বরং ২২ থেকে ২৮-এর মধ্যে রাখতে হবে। এ ছাড়া সারা রাত এসি না চালিয়ে বরং ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলেই এটি বন্ধ করে দিতে হবে।
নিয়ম মেনে চললে এসি থেকে শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা কারও নেই বলেই জানালেন আরিফুল ইসলাম। তবে যাঁরা একান্তই এসির হাওয়া নিতে পারেন না, তাঁদের এসি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রচণ্ড গরমে শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কম থাকায় হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে। হিটস্ট্রোকে অধিকাংশই বয়স্ক মানুষই আক্রান্ত হন। এমনিতেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীর দুর্বল হতে থাকে। দুর্বল শরীরে অতিরিক্ত গরম আক্রান্ত করে বেশি। প্রবীণদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত। হঠাৎ অতিরিক্ত গরমে তাঁরা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। এ থেকে রেহাই পেতে যতটুকু সম্ভব তীব্র গরমে তাদের এসিতেই রাখা উচিত।
আর শিশুদের ক্ষেত্রে ঘরে এসি ব্যবহার করলে তাদের সরাসরি ঠান্ডা বাতাসের কাছাকাছি রাখা যাবে না।
তাতে শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। শিশুর ঘরের তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি করে রাখা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে, এর থেকে কম যেন না হয়। যে ঘরে ছোট শিশু অথবা বৃদ্ধ মানুষ কিংবা কম মানুষ থাকে, সে ঘরে এসির আইফিল অপশন চালু করে রাখলে প্রয়োজনমতো ঠান্ডা সরবরাহ করবে।
এসি ব্যবহার করলে ঘরের আর্দ্রতা কমে যায়, এর থেকে শিশুর ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এসিতে ঘুমালে শিশুর হাঁচি-কাশি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই শিশুর নাকের চারপাশে সামান্য তেল লাগিয়ে দিলে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। সারা গায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। তাতে করে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে।
ঘরে এসি চললে শিশুর গায়ে পাতলা চাদর দিয়ে দিতে হবে। তবে কখনই মোটা কম্বল বা চাদর ব্যবহার করা যাবে না। এসি চালানোর আগে শিশুকে অবশ্যই ফুল হাতা পোশাক পরিয়ে দিতে হবে। এতে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কমে যাবে। ঘুমানোর সময় শিশু যেন অনেকক্ষণ এসির দিকে মুখ না দিয়ে ঘুমায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এসি কক্ষ থেকে বের হওয়ার আগে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসির ঠান্ডা হাওয়া শিশুর শরীরে লাগলে ক্ষতি নেই। তবে অনেক সময় ধরে এই ঠান্ডা বাতাসে থাকলে শিশুর সর্দি-কাশি হতে পারে। তাই ঘরের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসি চালালেও ঘরের তাপমাত্রা যেন খুব ঠান্ডা না হয় সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।