২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের সমন্বিত (কনসলিডেটেড) কর-পরবর্তী নিট মুনাফা (এনপিএটি) পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ১১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) ভিত্তিতে ব্যাংকটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮২৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময় ব্যাংকটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে ব্যালান্স শিটে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি (অ্যানুয়ালাইজড) অর্জন করেছে।
একদিকে ব্যাংকটির গ্রাহক আমানত ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে (অ্যানুয়ালাইজড) ৬১ হাজার ৬০২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে প্রদানকৃত গ্রাহক ঋণের পরিমাণ ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে (অ্যানুয়ালাইজড) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ৫৭ হাজার ৪১৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ—উভয় ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড আয়ের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাংকটি পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় (ইয়ার-অন-ইয়ার ভিত্তিতে) সামগ্রিক আয়েও ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
ব্যবসায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি পোর্টফোলিও কোয়ালিটিরও উল্লেখযোগ্য মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটির নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) রেশিও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে থাকা ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যাংকটির এনপিএল কাভারেজ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ১৩১ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১১৫ শতাংশ। পাশাপাশি ব্যাংকটির সুসংজ্ঞায়িত রিস্ক অ্যাপেটাইট স্টেটমেন্ট এবং প্রদানকৃত ঋণ আদায়ের চলমান প্রচেষ্টা পোর্টফোলিও কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ–
সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২৩ সালের একই সময়ে থাকা ২ দশমিক ৯৭ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ৪ দশমিক ৯২ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ১০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ৪৯ দশমিক ৫১ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৩৭ দশমিক ৬০ টাকার তুলনায় বৃদ্ধি পেয়ে ৪২ দশমিক ৩৮ টাকা হয়েছে।
সামগ্রিক প্রফিট্যাবিলিটির ওপর জোর দেওয়ায় সমন্বিত রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) উভয়ই বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ (২০২৩ সালে ছিল ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ) এবং ১ দশমিক ২৭ শতাংশ (২০২৩ সালে ছিল ১ দশমিক ০২ শতাংশ) হয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজের চেয়েও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া আমাদের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে আমাদের প্রতি গ্রাহকদের অবিচল আস্থা।সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও
যেহেতু ব্র্যাক ব্যাংক নিজেদের প্রবৃদ্ধির যাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই ব্যাংকটির রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বৃদ্ধির ওপর আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাব–অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর ফলে ব্যাংকটির রেগুলেটরি ক্যাপিটাল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা।
এ আর্থিক সাফল্য সম্পর্কে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ক্রমবর্ধমান গ্রাহকদের সেবা দেওয়া এবং গ্রাহকদের পরিবর্তনশীল আর্থিক প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে আমাদের সক্ষমতাকে তুলে ধরে। ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজের চেয়েও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া আমাদের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে আমাদের প্রতি গ্রাহকদের অবিচল আস্থা। টেকসই ব্যাংকিং–ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে সামনের দিনগুলোতেও আমরা আমাদের এই প্রবৃদ্ধিযাত্রা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন অর্জনের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের সব কর্মী ও কর্মকর্তাদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ, চ্যালেঞ্জিং সময়েও তাদের দূরদর্শী রেগুলেটরি দিকনির্দেশনার জন্য।’