উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর আরও তিন বছর বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে কৌশল তুলে ধরতে হবে।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল হিসেবে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে সব দর-কষাকষিতে ভবিষ্যৎ উন্নয়নশীল দেশের আগ্রহের জায়গাগুলো খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে বাংলাদেশকে।
ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক সামনে রেখে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর আরও তিন বছর বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি বাস্তবায়নে ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশের কৌশল প্রণয়ন করা উচিত। তা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার সুযোগও নিতে হবে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান।
আবুধাবিতে ১৩তম ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২৬-২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর বাণিজ্যমন্ত্রীরা বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ২০২২ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত ১২তম সম্মেলনে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাণিজ্য-সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা মেনে নেয় বড় দেশগুলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, কোনো দেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও তিন বছর তারা বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত রাখবে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত রাখবে বলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের প্রশ্নে সরকার পিছু হটবে না। সামনের দিকেই হাঁটবে। উত্তরণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগে থেকে প্রস্তুতি দরকার। আমরা একটু পিছিয়ে আছি।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেও এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাণিজ্য-সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে কোনো এলডিসি স্কিম না থাকায় তারা ডব্লিউটিওতে বাণিজ্য-সুবিধা বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিল। ফলে বাংলাদেশের উচিত, অন্য যেসব দেশের একই রকম চাহিদা আছে, তাদের গ্রুপে যোগ দেওয়া।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ওষুধের পেটেন্টের দাম দিতে হবে। এতে ইনসুলিনের দাম আট গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি না নিলে আমরা বিপদে পড়তে পারি।’
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শরীফা খান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অধিকাংশ বাজারে ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাজার-সুবিধা মোটামুটি পাওয়া যাবে। এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। তবে যত সুবিধাই পান না কেন, তা ২০৩১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হলে আর পাওয়া যাবে না।
প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, আগামী দিনগুলোতে এলডিসির সুবিধা অব্যাহত রাখা, জিএসপি প্লাসসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর-কষাকষির জায়গা আছে। ফলে ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ তৈরি হোক। আর বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিক। একই সঙ্গে তিনি ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ কী চায় বা কী পেল, সেসব বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ ও দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর প্ল্যানিং এডিটর আসজাদুল কিবরিয়া।