বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশে উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ‘ভ্যানিটি প্রকল্প’ অগ্রাধিকার পেয়েছে। ওই সময়ের অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি লন্ডভন্ড অর্থনীতি পেয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি আজ রোববার তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়। এ সময় কমিটির অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন তাঁর বক্তব্যে সাবেক সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
শ্বেতপত্র প্রণয়নে তাঁরা যেভাবে কাজ করছেন, সে সম্পর্কে জানাতে গিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা জানতে চেয়েছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে কেমন অর্থনীতি পেয়েছে এবং যে অবস্থায় পেয়েছে, তার পেছনে কাহিনি কী। এখন সংক্ষেপে বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার একটি লন্ডভন্ড অর্থনীতি পেয়েছে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আত্মতুষ্টি তৎকালীন নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিল। (তখন) সমস্যার স্বীকৃতি মেলেনি। আমাদের নিয়মনীতি এবং বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় সংগঠনগুলো তছনছ হয়ে গেছে। দুর্নীতির দুষ্টচক্র সব স্তর ঘিরে বসেছে। রাজকোষে পুরোপুরি জমা হয়নি করদাতার টাকা। উন্নয়নের নামে ভ্যানিটি প্রকল্প অগ্রাধিকার পেয়েছে। অনিয়ম নিয়ম হয়েছে, অযোগ্য মেধাকে হারিয়েছে। শর্ষের ভেতরে ভূতের রাজ চলেছে। এমতাবস্থায় সরকার চালানোর গুরুদায়িত্ব গ্রহণের জন্য শুধু ধন্যবাদ দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিচার হবে।’
বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়টি তুলে ধরে জাহিদ হোসেন বলেন, (সাবেক সরকারের) সুবিধাভোগী নেতা–নেত্রীরা, অলিগার্কের সহযোগিতায় অসাধু পথে অর্জিত বিশাল পুঁজি বিদেশে জমিয়েছে। বেশ কিছু বিষফোঁড়া অর্থনীতির প্রতিরোধশক্তি হ্রাস করেছে। এর পেছনে আন্তর্জাতিক কারণ থাকলেও সেটার ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময় ধরে সাধারণ মানুষকে জীবিকার সংকটে রেখেছে। জ্বালানি ও ব্যাংক খাত ছিল দুর্দশাগ্রস্ত। দুর্দশার কারণগুলো একই সূত্রে গাঁথা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধসে পড়েছে। সংকটের সুযোগ নিয়ে মুদ্রাবাজার দখল হয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের বোঝা বেড়েছে। অনেক মোটা অঙ্কের ঋণ থেকে অর্থের মূল্যও পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পরিসংখ্যানকে রাজনৈতিক প্রচারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য, মধ্য আয়ের ফাঁদ, বৈষম্যের আধিক্য, সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতা, প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈন্যতা ইত্যাদি দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। পরিসংখ্যানকে রাজনৈতিক প্রচারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কারণে এই হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের তথাকথিত জোয়ার আগামীর সম্ভাবনাকে ডুবিয়েছে।’