আজ সোমবার ভারতের শেয়ারবাজার খোলার পর আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দরপতনের ধারা অব্যাহত আছে। তাতে গত তিন কার্যদিবসে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন কমেছে ৬৫ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে গতকাল রোববার হিনডেনবার্গের অভিযোগের জবাবও দিয়েছে আদানি। কিন্তু তা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারেনি বলেই দেখা যাচ্ছে। খবর রয়টার্স
আদানি এন্টারপ্রাইজের যে এফপিও বাজারে ছাড়া হয়েছিল, তার দর ৩ শতাংশ বাড়লেও এখনো তা প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম। গত শুক্রবার তা আরও কম ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদানি গোষ্ঠী এর দর বা শিডিউল কোনো কিছুই পরিবর্তন করতে রাজি নয়।
২৫০ কোটি ডলারের এই এফপিওর লেনদেন আজ দ্বিতীয় কার্যদিবসে গড়িয়েছে। সকালে এই শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে ২ হাজার ৮৪৮ রুপিতে। অথচ এর প্রস্তাবিত দর ছিল ৩১১২ থেকে ৩২৭৬ রুপি। শুক্রবার প্রথম দিনেই এই এফপিওর দর ২০ শতাংশ কমে যায়। ফলে সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম দামের চেয়ে ১১ শতাংশ নিচে নেমে যায় তার দাম। সেদিন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ বিক্রি হয়েছে এই এফপিও। সে কারণে এই এফপিওর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারতের আইন অনুসারে, কোনো প্রস্তাবিত শেয়ার ৯০ শতাংশ বিক্রি না হলে ইস্যুয়ারকে পুরো অর্থ ফেরত দিতে হয়। ফলে এখন যদি তা হয়, তাহলে আদানি গোষ্ঠীকে লজ্জার মধ্যে পড়তে হবে। তবে আদানি গোষ্ঠী রয়টার্সকে বলেছে, শিডিউল অনুসারে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকগুলো যদিও শেয়ার বিক্রির মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বলছে, তা না হলে অন্তত দাম কমানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা।
ভারতের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর আজ সোমবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি টোটাল গ্যাসের দর কমেছে ২০ শতাংশ, আদানি গ্রিন এনার্জির দাম কমেছে ১৬ শতাংশ আর আদানি পোর্ট ও স্পেশাল ইকোনমিক জোনের দর কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ এক প্রতিবেদনে ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্টক জালিয়াতির অভিযোগ তোলে।
তারা বলে, জালিয়াতির মাধ্যমে আদানি শেয়ারের দর বাড়িয়েছেন। এরপর আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর হু হু করে পড়ে যায়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গোষ্ঠী বলছে, ‘ভারতের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ’ হচ্ছে। আজ সেই মন্তব্যের পাল্টা হিসাবে মার্কিন এই সংস্থা নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে বলল, জাতীয়তাবাদের নাম করে কারচুপি লুকাতে পারবে না আদানি গোষ্ঠী।
হিনডেনবার্গ রিসার্চ বিবৃতিতে বলছে, খুব সম্ভবত মূল বিষয়গুলো থেকে নজর অন্য দিকে সরিয়ে নিতেই জাতীয়তাবাদকে টেনে আনছে আদানি গোষ্ঠী। একই সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর ‘দেশের ওপর আক্রমণে’র অভিযোগ বিদ্রূপ করে বলা হয়েছে, ‘নিজের ও শিল্পগোষ্ঠীর উল্কার মতো উত্থানকে ভারতের সাফল্যের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানি।’
তবে হিনডেনবার্গ ভারতকে খাটো করতে চায়নি এবং তাঁদের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। ভারতের গণতন্ত্রে আস্থা রাখে তারা এবং দেশটি যে শিগগিরই বিশ্বের পরাশক্তির তালিকায় ঢুকতে যাচ্ছে, সে কথাও জানানো হয়েছে।
গতকাল হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের জবাবে ৪১৩ পৃষ্ঠার চিঠিতে আদানি গোষ্ঠী বলে, ভারতীয় আইনিব্যবস্থা সম্পর্কে হিনডেনবার্গের সম্যক ধারণা নেই। ভারতের বাজারে কীভাবে পুঁজি সংগ্রহ হয়, তা-ও জানে না হিনডেনবার্গ। হিনডেনবার্গ এই ‘অজ্ঞানতা’র উদাহরণও দিয়েছেন আদানিরা।
হিনডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে দাবি করেছিল, গত কয়েক বছরে আদানি গোষ্ঠীর একাধিক কোম্পানির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা (সিএফও) পদত্যাগ করেছেন। এই তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে আদানি গোষ্ঠী। আদানি গোষ্ঠী বলছে, ওই কর্মকর্তারা আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গেই যুক্ত। এমনকি তাঁদের কেউ কেউ বড় দায়িত্ব পেয়েছেন; পদত্যাগ করেননি কেউ।