তরুণদের কর্মসংস্থান

দেশে তরুণদের ১০ শতাংশ বেকার: আইএলও

২০২২ সালের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার দাঁড়াতে পারে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে। এটি বৈশ্বিক হারের সমান।

মহামারির ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের তরুণসমাজ। কিন্তু কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে তারা এখনো পিছিয়ে আছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের জন্য শ্রমবাজার আরও কঠিন হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের চেয়ে তাঁরা পিছিয়ে আছেন।

২০২২ সালে এই বয়সী তরুণ বেকারের সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে। তবে ২০২১ সালের চেয়ে তা কিছুটা কম (৭ কোটি ৫০ লাখ)। তবে ২০১৯ সালে প্রাক্‌-মহামারি সময়ের চেয়ে তরুণ বেকারের সংখ্যা এখনো ৬০ লাখ বেশি।

‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ’ বা ‘বিশ্বজুড়ে তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রবণতা ২০২২’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে আইএলও এসব
তথ্য দিয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশি তরুণদের বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, যদিও জাতীয় পর্যায়ের বেকারত্বের হার মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় তরুণদের বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৮১১, মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

সম্প্রতি একশনএইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তাঁরা চাকরি পাবেন না, গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ। চাকরি, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণে নেই ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ।

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার দাঁড়াতে পারে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে। এটি বৈশ্বিক হারের সমান। তবে এই অঞ্চলের সব দেশের অবস্থা এক নয়।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যেমন উন্নত দেশগুলো এগিয়ে আছে, তেমনি তরুণদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে যেমন তফাত আছে, তেমনি উচ্চ আয়ের দেশগুলোর সঙ্গেও তাদের পার্থক্য আছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশগুলো তরুণদের কর্মসংস্থানে প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাবে। তবে অন্যান্য দেশের তরুণদের বেকারত্বের হার প্রাক্‌-মহামারি সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি থাকবে।

মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ নেই, এমন তরুণের সংখ্যা বেড়েছে। তবে ২০২১ সালের তথ্য এখনো আইএলওর হাতে নেই। ২০২০ সালে এই হার ছিল ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৫ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। তবে মহামারির ক্ষত শিগগিরই সারছে না আর তাতে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে আইএলও।

অন্যদিকে পুরুষের তুলনায় নারীদের অবস্থা খারাপ। ২০২২ সালে যেখানে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারীর বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান থাকবে বলে পূর্বাভাস করা হচ্ছে, সেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার দাঁড়াতে পারে ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ তরুণীদের তুলনায় তরুণদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা দেড় গুন বেশি। নারী–পুরুষের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নিম্ন–মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বের মোট কর্মক্ষম মানুষের ৬০ শতাংশ (প্রায় ২০০ কোটি) নারী, পুরুষ ও তরুণ জীবন অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করেন। কোভিড-১৯ মহামারিতে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষের নাজুকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই খাতে যারা কাজ করেন, তাঁদের বড় অংশই তরুণ। অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীরা আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীদের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রে অনেক কম সুবিধা পান। সে কারণে এরা অনেক বেশি অরক্ষিত। তাদের এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ, মানসম্মত শিক্ষার অভাব।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা গেলে একেকজন শ্রমিকের কাছ থেকে দুই-তিনগুণ প্রবাসী আয় পাওয়া সম্ভব। দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরি বা মাথাপিছু প্রবাসী আয় সবচেয়ে কম।