বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। প্রতিবছর বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ কত অর্থ পরিশোধ করতে হয়, আগামী বছর কী পরিমাণ অর্থ সুদাসল বাবদ পরিশোধ করতে হবে—এসব বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কাছে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল সোমবার ইআরডি সচিব শরিফা খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। ঢাকার আগারগাঁওয়ের ইআরডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতৃত্ব দেন আইএমএফের মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ।
বৈঠকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দেওয়া রাশিয়ার ঋণ নিয়েও আলোচনা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দেশের আর্থিক লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ বা আর্থিক লেনদেনে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। জবাবে ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার ঋণ পরিশোধ বা লেনদেনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, সার্বিক ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে ইআরডির কর্মকর্তারা আইএমএফকে জানিয়েছেন যে এখন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যথাসময়েই ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতেও তেমন সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ পরিশোধে কখনো ব্যর্থ হয়নি।
আইএমএফের প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছেন, আগামী তিন-চার বছর বাংলাদেশ কী পরিমাণ বিদেশি সহায়তা পেতে পারে। বাজেট সহায়তাবাবদ অর্থ কোন কোন দেশ বা সংস্থার কাছে চাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার ঋণের সুদাসল বাবদ পরিশোধ করতে হবে। প্রতিবছরই এর পরিমাণ বাড়বে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২৮ কোটি ডলার ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪০২ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ৫১৫ কোটি ডলার ব্যয় হবে। ঋণ পরিশোধের চাপ কমতে থাকবে। বিদ্যমান ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী তিন বছর বাংলাদেশের ক্রমপুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণও বাড়তে থাকবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ক্রমপুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮ হাজার ৫২৪ কোটি ডলার।
আইএমএফ প্রতিনিধিদল গতকালের বৈঠকে পাইপলাইনে (প্রতিশ্রুত) থাকা বিদেশি ঋণের অর্থ দ্রুত ছাড় করার তাগিদ দিয়েছে। জবাবে ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদায়ী অর্থবছরে এক হাজার কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। প্রতিবছরই ছাড়ের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বিরাট পাইপলাইন রয়েছে।
বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকেরা ইআরডি সচিব শরিফা খানের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি জানিয়েছেন, আজ (মঙ্গলবার) অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইএমএফের মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।
আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পেতে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে এসেছে। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছে।
আইএমএফ গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। আগারগাঁওয়ে বিডার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় আইএমএফের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমএফ প্রতিনিধিরা আমাদের কাছে কোনো সংস্কার প্রস্তাব করেননি। শুধু দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।’
এদিকে সফরকারী আইএমএফের প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বৈঠক করে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে পুঁজিবাজারে নানা ধরনের বন্ডের লেনদেনকে জনপ্রিয় করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিএসইসি কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।